Advertisement
E-Paper

নিজের বাড়িতেই খুন ‘সুদের কারবারি’ পুলিশকর্মী

মাঝরাতে নিজের বাড়িতেই খুন হলেন এক পুলিশকর্মী। দুষ্কৃতীদের আঘাতে গুরুতর জখম হলেন তাঁর স্ত্রী। নিহতের নাম রমাপ্রসাদ চন্দ (৫০)। তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’-এ নদিয়ায় কর্মরত ছিলেন। রমাপ্রসাদবাবুর স্ত্রী-র অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ১০:৪২
এই ঘরেই খুন হন রমাপ্রসাদবাবু।

এই ঘরেই খুন হন রমাপ্রসাদবাবু।

মাঝরাতে নিজের বাড়িতেই খুন হলেন এক পুলিশকর্মী। দুষ্কৃতীদের আঘাতে গুরুতর জখম হলেন তাঁর স্ত্রী। নিহতের নাম রমাপ্রসাদ চন্দ (৫০)। তিনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’-এ নদিয়ায় কর্মরত ছিলেন। রমাপ্রসাদবাবুর স্ত্রী-র অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার ভোরে কৃষ্ণনগরের পালপাড়ায় রামপ্রসাদবাবুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে তিন দুষ্কৃতী। বাড়ির সামনের দিকে একটি জানলার গ্রিল ভেঙে তারা ঢোকে। স্বামী-স্ত্রী তখন দোতলায় আলাদা আলাদা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁদের ছেলে রুদ্রাশিস উপরে ছাদের ঘরে শুয়ে ছিল। ঘরে ঢুকে প্রথমে দুষ্কৃতীরা রমাপ্রসাদবাবুর হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাঁর স্ত্রী জয়ন্তীদেবীকেও দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। এর পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে দু’জনকেই কোপানো হয়।

নীচের ঘরে যখন এমন কাণ্ড চলছে তখন উপরের ঘরে শুয়ে এ সবের বিন্দুমাত্র টের পাননি রুদ্রাশিস। এমনকী, প্রতিবেশীরাও কিছু জানতে পারেননি। দুষ্কৃতীরা চলে ছেলের মোবাইলে ফোন করে ঘটনার কথা জানান আহত জয়ন্তীদেবী। মায়ের ফোন পেয়ে ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে তিনি দেখেন যে, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। কোনও রকমে দরজা ভেঙে বাইরে এসে তিনি আত্মীয়দের খবর দেন। রক্তাক্ত এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দম্পতিকে নিয়ে যাওয়া হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিত্সকেরা রমাপ্রসাদবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জয়ন্তীদেবী এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন ওই হাসপাতালে।

কী কারণে খুন হলেন ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’-এর ওই কর্মী?

আহত জয়ন্তীদেবী।

নিহত রমাপ্রসাদবাবু।

পুলিশ গোটা ঘটনাটি নিয়ে ধন্দে রয়েছে। কেন না প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েকটি বিষয় গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রমাপ্রসাদবাবু বাজারে সুদে টাকা খাটাতেন। এবং সেই টাকার পরিমান বেশ কয়েক ২৫ লাখ টাকা। এত টাকা ওই পুলিশকর্মী পেলেন কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পারিবারিক অবস্থা ভাল হলেও, লাখ লাখ টাকা বাজারে সুদে খাটানোর মতো ভাল নয়। এমনকী, পালপাড়ায় তাঁর বিশাল বাড়ি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এখান থেকেই তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, এই খুনের পিছনে সুদের কারবারের একটা যোগ আছে। ওই অংশের যুক্তি, সুদে টাকা নিতে গেলে কিছু গচ্ছিত রাখতে হয়। হয়তো কেউ টাকা নেওয়ার পর সেই গচ্ছিত ‘সম্পত্তি’ হাতাতে এসেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, কেউ বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছিল রমাপ্রসাদবাবুর কাছ থেকে। সেই টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয়, সে কারণেই খুন করেছে তাঁকে। ওই দম্পতি দুষ্কৃতীদের আগে থেকে চিনতেন বলেও তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা।

গোয়েন্দাদের অন্য একটা অংশকে আবার ভাবাচ্ছে আর একটা বিষয়। যে হেতু রমাপ্রসাদবাবু ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’-এর কর্মী ছিলেন, কাজেই তাঁকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের কাজ করতে হত। তিনি হয়তো এমন কোনও তদন্তের কাজে যুক্ত ছিলেন, যেখানে তাঁকে খুন করলে কোনও একটা পক্ষের লাভ আছে। সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। আরও একটা জিনিস ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। নীচের ঘরে এমন কাণ্ড ঘটে গেলেও উপরের ঘরে শুয়ে কেন তা টের পেলেন না রুদ্রাশিস? ওই রাতে জোরদার বৃষ্টি নেমেছিল। তবে কী বৃষ্টির রাতে কিছুই শুনতে পাননি তিনি? মায়ের ফোনে ঘুম ভেঙে সব জানতে পারেন? তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সবটাই তাই কেবল সন্দেহ। যার ঊর্ধে কাউকেই রাখছেন না তদন্তকারীরা।

নদিয়ার পুলিশ সুপার ভরতকুমার মীনা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, এটি ডাকাতির ঘটনা। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। আহতের সঙ্গে এখনও আমাদের কথা হয়নি।’’

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

krishnanagar police murder nadia mobile
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy