Advertisement
E-Paper

নিশ্চুপে বন হারাচ্ছে বাগদাবড়া

দিব্যি গড়ে উঠেছিল ফরাক্কার বাগদাবড়া বনাঞ্চল। রাজ্য বন দফতর .৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নির্দিষ্ট করে সেখানে আরও গাছ লাগায়। গড়ে ওঠে “বাগদাবড়া সংরক্ষিত বন”।

বিমান হাজরা ও গৌতম প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০১:৫৫

দিব্যি গড়ে উঠেছিল ফরাক্কার বাগদাবড়া বনাঞ্চল। রাজ্য বন দফতর .৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নির্দিষ্ট করে সেখানে আরও গাছ লাগায়। গড়ে ওঠে “বাগদাবড়া সংরক্ষিত বন”। স্থানীয় লোকেদের কাছেপিঠে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা হিসেবে বেশ পরিচিতি পায় বন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই বন এখন দুষ্কৃতীদের কবলে। অবাধে চুরি হয়ে যাচ্ছে শাল, শিশুর মতো দামি দামি গাছ। ফলে যে বনে একসময় আলো ঢুকতে ভয় পেত সেই বন এখন পোড়া শ্মশান।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত এলাকার এই বনাঞ্চলকে ঘিরে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। লাগানো হয় শাল, শিশু, সেগুন, আকাশমণি, অর্জুন, মহুয়ার মতো গাছের হাজার হাজার চারা। সেই গাছ এখন আকাশ ছুঁয়েছে। নয়নাভিরাম সেই বন দেখেতে যাতে পর্যটকেরা আসেন তার জন্য গড়ে তোলা হয় একটি অতিথিনিবাসও। দেখভালের জন্য বিট অফিসারের নেতৃত্বে কর্মী নিয়োগও করা হয়।

এখন অতিথিনিবাস তালাবন্ধ। বিট অফিসার বিদায় নিয়েছেন সেই কবে। আসেননি নতুন কেউ। বনের দেখভালে এখন এক বনকর্মী ও দুই বন শ্রমিক। আগে বনে প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসতেন। পাশেই ছিল পুলিশ ক্যাম্প। পর্যটকদের আনাগোনায় গড়ে উঠেছিল বহু খাবার ও চায়ের দোকানও। এখন পুলিশ ফাঁড়ি উঠে যাওয়ায় বন এখন দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। নিরাপত্তার কারণে তাই এখন আর পর্যটকের দেখা মেলে না বাগদাবড়া বনে। ক্রেতার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দোকান।

ফরাক্কার প্রাক্তন সাংসদ আবুল হাসনাত খান জানান, ফরাক্কায় বাগদাবড়া ও ব্যারাজের বনাঞ্চল-দুই প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে। পরে রাজ্য বন দফতর প্রচুর গাছ লাগায়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুটি বন থেকে গত কয়েক বছরে প্রচুর নামী-দামি গাছ লোপাট হয়ে গিয়েছে। ফরাক্কা ব্যারাজের বনটি তাও প্রাচীর ও তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা ছিল। বাগদাবড়াতে সেটুকুও না থাকায় গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। অথচ দু’টি জায়গাতেই সরকারি স্তরে একটু উদ্যোগ নিলে দু’টি ভাল পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেত।

স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার তৃণমূল নেতা সাকিরুদ্দিন বলেন, “ছোটবেলায় বনে খেলাধুলো করে কাটিয়েছি। চোখের সামনে সেই বন শেষ হয়ে গেল।” ফরাক্কার বাহাদুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের তারামণি মুর্মু বলেন, “বনের বড় বড় দামী গাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। আগে একটা পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। এখন সেটি না থাকায় অবাধে গাছ লুঠ চলছে।”

তিনি জানান, বনকর্মী থেকে পুলিশ সবাই সব জানে। কিন্তু চোর ধরা পড়ে না। তাই গাছ চুরিও বন্ধ হয় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছ চুরির পিছনে পুলিশের মদত রয়েছে। কিছুদিন আগে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে পাশেই ধুলিপাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রচুর চোরাই কাঠ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি। এখন তো পুরো ঘটনাটাই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।

ফরাক্কা ব্লকের এক প্রশাসনিক কর্তা অবশ্য চুরির পিছনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কারও কারও হাত দেখছেন। তাঁর দাবি, বাগদাবড়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষের হাতে কাজ রয়েছে। তাই রুজির টানে স্থানীয়দের কেউ কেউ গাছ চুরি করছেন।

রঘুনাথগঞ্জ রেঞ্জের অধীনে ফরাক্কার বনাঞ্চল। রেঞ্জার জানুয়ারি মাসে অবসর নিয়েছেন। দায়িত্বে আছেন লালবাগের রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিংহ। তিনি জানান, কর্মীর অভাবে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না বাগদাবড়ার বনাঞ্চলে। দুষ্কৃতীরা বহুবার সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালিয়েছে বন কর্মীদের উপর। খালি হাতে তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই গাছ চুরি ঠেকানো যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘তা ঠেকাতে আমরা বাগদাবড়ায় আগের মতো একটি পুলিশ ক্যাম্প চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি।”

forest Bagdabra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy