Advertisement
E-Paper

নোটবন্দি ব্যাঙ্কে খুশি, গ্রাহকেরা দিলেন সংবর্ধনা

নোট বাতিলের পরের দিনগুলোয় আমজনতার চোখে প্রায় ‘গণশত্রু’ হয়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্ক। দিনের পর দিন লোকে গিয়ে মাথা খুঁড়েছে, রাত থেকে লম্বা লাইন দিয়েছে, কিন্তু নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা হাতে পায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০০:২১

নোট বাতিলের পরের দিনগুলোয় আমজনতার চোখে প্রায় ‘গণশত্রু’ হয়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্ক। দিনের পর দিন লোকে গিয়ে মাথা খুঁড়েছে, রাত থেকে লম্বা লাইন দিয়েছে, কিন্তু নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা হাতে পায়নি। হতাশায় কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি ব্যাঙ্কের বাবুদেরও লোকে শাপশাপান্ত করতে ছাড়েনি।

সেই জনতাই বেলডাঙার পুলিন্দা এলাকায় সংবর্ধনা দিল এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার ও কর্মীদের। কারণ, ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পর থেকে যথাসম্ভব গ্রাহকদের পাশে দাঁড়ানো, সীমিত ক্ষমতা সত্ত্বেও তাঁদের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা।

শুক্রবার ম্যানেজার হিমাদ্রীনারায়ণ সাহা ও তার পাঁচ সহকর্মীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে হাতে ট্রফি, ফুল ও মিষ্টি দিয়ে সম্মানিত করার সময়ে ব্যাঙ্কে হাজির ছিলেন ৭০-৭৫ জন গ্রাহক। স্থানীয় মহুলা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান জানিলা বিবি তাঁদের সংবর্ধনা দেন। কিন্তু কী এমন পরিষেবা পেয়েছিলেন, যাতে তাঁরা এত আপ্লুত?

গত ১৮ নভেম্বর শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য টাকা তুলতে ম্যানেজারকে ফোন করে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন ইটভাটার মালিক আজিম আলি। লাইনে তখন দু’শো লোক দাঁড়িয়ে। কেন আজিম লাইন না দিয়ে সটান ঢুকে যাচ্ছেন, তা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। এক সিভিক ভল্যান্টিয়ার তা থামাতে গেলে এক গ্রাহক তাঁর ডান হাতে ঘুষি মারেন। হাত ফেটে রক্তারক্তি। অবস্থা দেখে ম্যানেজারই মারপিট থামাতে আসেন। তাঁর মুখ লক্ষ্য করেও ছুটে আসে ঘুষি। তিনি মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করায় তা হাতে লাগে।

সিভিক ভল্যান্টিয়ার পুলিশকে ফোন করতে যাচ্ছিলেন। তাঁকে থামিয়ে ম্যানেজার হাত জোড় করে সকলকে বলেন, ‘‘মার খেলাম, কিন্তু পুলিশকে জানাচ্ছি না। শর্ত হল, লাইনে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হবে। না হলে পুলিশ ডাকব।’’ আজিম এ দিন বলেন, ‘‘ওঁর জন্যই শ্রমিকদের টাকা দিতে পেরেছি। অন্য ব্যাঙ্ক হলে সে দিন ঝাঁপ ফেলে দিত!’’

রতনপুরের রত্না মণ্ডল জানাচ্ছেন, বোনের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় হচ্ছে না দেখে তিনি ম্যানেজারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। হিমাদ্রীনারায়ণ জানান, যদি অন্য ব্যাঙ্ক থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্টে ব্যাঙ্কে টাকা ঢোকানো গেলে তিনি তা তোলার ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই মতোই কাজ হয়। ভাল ভাবেই মিটে যায় বিয়ে।

বহরমপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ভাকড়ির প্রশান্ত মণ্ডলের প্রসূতি স্ত্রী। ডিসেম্বর, প্রথম সপ্তাহ। নার্সেরা জানান, ওষুধ ও ইঞ্জেকশনের জন্য ১০ হাজার টাকা জমা করতে হবে রাতেই। প্রশান্ত চার হাজার টাকা ধার করেন এক ব্যবসায়ী বন্ধুর থেকে। বাকি ছ’হাজার? বেশির ভাগ এটিএমেই টাকা নেই। শেষে খবর মেলে, পুলিন্দার ওই ব্যাঙ্কটির এটিএম খোলা। সেখান থেকে টাকা তুলেই জমা করেন।

এ দিন সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল ব্যাঙ্কের গ্রাহক, সুতিঘাটা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিলালউদ্দিন মণ্ডল এবং স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর উদ্যোগে। আপ্লুত ম্যানেজার বলেন, ‘‘ওই সময়ে রোজ এক কিলোমিটার লম্বা লাইন। দুপুর ৩টে পর্যন্ত লিঙ্ক নেই। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার চেষ্টা করেছি সকলে। তবে, গ্রাহকদের সহযোগিতাও মিলেছে। এই সংবর্ধনা তাই সকলের প্রাপ্য।’’

Bank Authorities Demonetisation Felicitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy