Advertisement
২০ মে ২০২৪

বিনা যুদ্ধের ভোটে হেরে হতাশ ফ্লেক্স-ব্যবসায়ীরা

দিন পনেরো আগে একেবারে ঝকঝকে নতুন দামি ফ্লেক্স-প্রিন্টার কিনেছিলেন। কিন্তু এখানে শাসক দলের দাপটে  বিরোধীরা মনোনয়ন প্রায় দিতেই পারেনি। বিরোধী-শূন্য ভোটে ভোটের প্রচারও শূন্য। এখনও কোনও রাজনৈতিক দল পা রাখেনি ছাপাখানার গলিতে। ছাপাখানার ব্যবসায়ীরা চৈত্রের দুপুরে ঝিমোচ্ছেন বা দিনভর মাছি তাড়াচ্ছেন।

হাতে কাজ নেই। বসে আছেন কর্মীরা। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

হাতে কাজ নেই। বসে আছেন কর্মীরা। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

যুদ্ধের আগেই জমি অর্ধেক দখল হয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা বহু জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে না-পারায় সেখানে একতরফা জয় হয়েছে শাসক দলের। সেয়ানে-সেয়ানে টক্করই যেখানে নেই সেখানে প্রচারের লড়াই থাকবে কোথা থেকে? খামোখা কেন ফ্লেক্স, ব্যানার, দেওয়াল লিখনে কাঁড়ি টাকা খরচ করবে বিরোধীরা? আবার শাসক দলের কাছে অনেকটা ফুটবল মাঠের ওয়াকওভার-এর মতো পরিস্থিতি। রেফারি বাঁশি বাজালেই গোল দেওয়া হবে। জয় যখন নিশ্চিত সেখানে কেনই বা কষ্ট করে প্রচারের পথে হাঁটবে শাসক দল? বরং জেতার পর সেই টাকায় দিব্যি ভোজ দেওয়া যাবে। ফলে তারা প্রচারের রাস্তা এড়িয়ে কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছে ছাপাখানার মালিকদের, ভোটের বাজারে যাঁরা জমিয়ে ব্যবসা করার সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। এখন তাঁরা মাথা চাপড়াচ্ছেন।

যেমন, ডোমকলের বাসিন্দা নবাব আলি। দিন পনেরো আগে একেবারে ঝকঝকে নতুন দামি ফ্লেক্স-প্রিন্টার কিনেছিলেন। কিন্তু এখানে শাসক দলের দাপটে বিরোধীরা মনোনয়ন প্রায় দিতেই পারেনি। বিরোধী-শূন্য ভোটে ভোটের প্রচারও শূন্য। এখনও কোনও রাজনৈতিক দল পা রাখেনি ছাপাখানার গলিতে। ছাপাখানার ব্যবসায়ীরা চৈত্রের দুপুরে ঝিমোচ্ছেন বা দিনভর মাছি তাড়াচ্ছেন। এক মালিক দুঃখে বলেই ফেললেন, ‘‘এই সে দিনও এক দলের কর্মীরা এসে ঝুলোঝুলি করে গেল, তাঁদের নেতার হাত জোড় করা ছবি দিয়ে একটা ফ্লেক্স করতে হবে দ্রুত। ছবি যেন তিন ফুটের কম না-হয়। অথচ কাল এসে বলল, ফ্লেক্সের আর দরকার নেই!’’

ছাপাখানার ব্যবসা মফসসলে এখন ক্রমশ ছড়াচ্ছে। ব্যানার, ফ্লেক্সের জন্য আর কলকাতার উপর নির্ভর করতে হয় না। বহু যুবক ঝুঁকছেন এই ব্যবসায়। ভোটের মতো কিছু সময়ে ব্যবসার লাভ বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকেন তাঁরা। এ বছরের ভোট মরসুমে সেই চেষ্টায় তাঁদের ক্ষান্ত দিতে হচ্ছে। ইসলামপুর বাজারে ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করে ফ্লেক্স প্রিন্টার বসিয়েছেন রাকেশ সরকার। বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে অন্য বার আমাদের দম ফেলার সময় থাকে না। চাহিদা দেখে এ বার ভোটের আগে ব্যঙ্ক ঋণ নিয়ে ফ্লেক্স প্রিন্টার কিনেছি। কিন্তু এখন দেখছি, কোনও হিসেব মিলছে না।’’

একই অবস্থা ডোমকলের নবাব আলির। তাঁর কথায়, ‘‘১২ লক্ষ টাকা খরচ করে নতুন মেশিন বসালাম। কোনও দলই এল না ফ্লেক্স বানাব বলে। জন্মে এমন ভোট দেখিনি। ক্ষতি কী করে মেটাব জানি না।’’ শুধু ফ্লেক্স নয়, লিফলেট থেকে নকল ব্যালট, পোস্টার থেকে হ্যান্ডবিল—সব তৈরির হিড়িক পড়ে এই সময়টায়। এ বার সব ফাঁকা।’’ বহরমপুরের এক ছাপাখানার মালিক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘‘ভোটের বাজারে ফ্লেক্সের চাহিদা থাকবে বলে কলকাতা থেকে ৮-১০ লক্ষ টাকার রোল কিনে এনেছি। কিন্তু ফ্লেক্সের বাজার এখনও চাঙ্গা হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ফ্লেক্সের চাইতে দেওয়াল লিখনে বেশি আগ্রহী।’’ বহরমপুরের তিন ব্যবসায়ী ১০-১২ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাপাখানায় নতুন মেশিন কিনে এনেছেন। কিন্তু সেখানেও রাজনৈতিক ফ্লেক্স ছাপার কাজ নেই। তাঁদের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে মেশিন কিনেছি। ফ্লেক্সের চাহিদা না-থাকায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE