Advertisement
২৫ মে ২০২৪

ভরা বর্ষায় ভরসা খুঁজছে বাইক-ছাতা

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢিমেতালে মোটরবাইক চালাচ্ছেন বেথুয়াডহরির মোজাম্মেল শেখ। পিছনে টুকটুক করে এগিয়ে চলেছে টোটো। মাথায় মাইক বাঁধা।

পথচারীর চোখ টানছে এমনই বাইক-বর্ষাতি। নিজস্ব চিত্র

পথচারীর চোখ টানছে এমনই বাইক-বর্ষাতি। নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য ও গৌতম প্রামাণিক
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

‘আনন্দ সংবাদ, আনন্দ সংবাদ...’

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢিমেতালে মোটরবাইক চালাচ্ছেন বেথুয়াডহরির মোজাম্মেল শেখ। পিছনে টুকটুক করে এগিয়ে চলেছে টোটো। মাথায় মাইক বাঁধা।

অমায়িক গলায় এক জন বলে চলেছেন—‘এ ছাতা উল্টোয় না, বাইকের গতি কমায় না। ঝমঝম বৃষ্টিতেও চালক ও আরোহীকে ভেজায় না।’

সাত-সকালে এ আবার কেমন প্রচার!

জানলা খুলে উঁকি দিল কিশোরী। ক্লাবের ছেলেরা ক্যারাম ফেলে বেরিয়ে এল বারান্দায়। মুদির দোকানের ভিড় বোঁ করে ঘুরে গেল রাস্তায়। টিউশনে যাওয়া পড়ুয়া ঘাড় ঘুরিয়ে বাইক-ছাতা দেখতে গিয়ে সাইকেল নিয়ে ধপাস!

দেখবার মতোই জিনিস বটে!

উজ্জ্বল রঙিন কাপড়ে চেনা বাইকও অচেনা যান বলে মনে হচ্ছে। ভিড়টা নেমে এল রাস্তায়। থামতে হল মোজাম্মেলকেও। তার পরেই শুরু হল প্রশ্নবাণ।

—আচ্ছা, এটা থাকলে কি রেইন কোট পরার দরকার নেই?

—জোরে বাইক ছুটলে ছাতার মতো উল্টে যাবে না তো?

—ওয়াইপার নেই কেন?

— গ্রীষ্মকালেও ব্যবহার করা যাবে?

মোজাম্মেলের অবস্থা তখন দেখার মতো। কোনও রকমে সামাল দিলেন, ‘‘দোকানে আসুন। সেখানেই সব উত্তর পাবেন।’’ টোটো ছুটল পাশের পাড়ায়। কিন্তু বালি পাথরের কারবারি মোজাম্মেলের মাথায় বাইক-ছাতা উঠল কী ভাবে?

দিনকয়েক আগে মোজাম্মেল বাড়িতে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ একটা চ্যানেলে আটকে যায় চোখ। বৃষ্টিকে কাঁচকলা দেখিয়ে ছাতা মাথায় দিব্যি ছুটছে বাইক। কিন্তু এমন ছাতা মিলবে কোথায়?

অন্তর্জালে মোজাম্মেল তেমন দড় নন। তাঁর এক বন্ধুর সাহায্যে গুগল ঘেঁটে মিলল মুম্বইয়ের ঠিকানা। সেখানে যোগাযোগ করে কলকাতার এক দোকানের খোঁজ মেলে। সেখান থেকেই রবিবার ৪০টি বাইক-ছাতা এনেছেন মোজাম্মেল। ছাতা তো এল। কিন্তু সে তো আর বালি-পাথরের সঙ্গে বিক্রি করা যায় না। এগিয়ে এলেন স্থানীয় বস্ত্র ব্যবসায়ী দেবাশিস বসাক। তিনিই তাঁর দোকানে ছাতাগুলো রেখেছেন। বিক্রি হচ্ছে সেখান থেকেই। হাসতে হাসতে দেবাশিস বলছেন, ‘‘বন্ধুর শখ মেটাতে এটুকু না করার কী আছে!’’

আর শুরুতেই কিস্তিমাত। সকালে প্রচারের পরে সোমবার সারা দিনে বিক্রি হয়েছে পাঁচটি ছাতা। মোজাম্মেল বলছেন, ‘‘তাই বলে কিন্তু পুরনো ব্যবসা ছাড়ছি না।’’

শালিগ্রামের রাজু শেখ, বেথুয়াডহরির শঙ্কর দাসেরা ছাতার প্রেমে পড়ে গিয়েছেন। এগারোশো টাকা দিয়ে কিনে নিজেরাই বাইকে টাঙিয়ে ফেলেছেন সেই বাহারি ছাতা। ছাতি ফুলিয়ে শঙ্কর বলছেন, ‘‘বর্ষার বৃষ্টি বড্ড বেআক্কেলে। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। এখন সে সব ঝঞ্ঝাট নেই। মেরে পাস ছাতা হ্যায়!’’

পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদে এখনও এমন ছাতা চোখে পড়েনি। তবে বহরমপুরের চিকিৎসক চন্দ্রমৌলি রায় নেপাল থেকে কিনে এনেছেন অন্যরকম বর্ষাতি। সেটা অবশ্য বাইক-ছাতার মতো নয়। তবে বাইকে দু’জন সেই বর্ষাতি জড়িয়ে বসতে পারেন। গাড়িও ভিজবে না। ওই চিকিৎসক বলছেন, ‘‘বর্ষায় ভরসা করা যায়।’’

বৃষ্টিভেজা বিকেলে বাইকের পিছনে বসেছেন তরুণী। গুনগন করে ধরেছেন, ‘‘এই পথ যদি না...।’’ শুকনো লুকিং গ্লাসে চোখ রেখে মুচকি হাসছেন যুবক, ‘‘ছাদ জুটতে সময় লাগবে। কিন্তু এক ছাতার নীচে পথচলাও তো কিছু কম প্রাপ্তি নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bike-Raincoat Bike Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE