Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বাড়িতে ঢুকে গুলি, নিহত বিজেপি নেতা

বিজেপির দাবি, ভোটের দিন ওই এলাকার বুথটি দখল করার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। শান্তিপুর শহর থেকে আসা বাইক-বাহিনী হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের নেতৃত্বে  বিজেপি কর্মীরা বাধা দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই হুমকি আসছিল। তা বলে একেবারে ঘরে ঢুকে খুন করা হতে পারে তা বোধহয় কেউই ভাবেননি।

বুধবার রাতে শান্তিপুরের মেলের মাঠ এলাকায় বাড়িতে ঢুকে পরপর তিনটি গুলি করা হয় বিজেপির বুথ সভাপতি বিপ্লব সিকদারকে (৪৫)। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মারা গিয়েছেন। প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ১২ ঘণ্টা শান্তিপুর শহর বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।

নিহতের পরিবারের তরফে ১৭ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের প্রায় সকলেই শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের অনুগামী বলে পরিচিত। ইতিমধ্যে রথীন দেবনাথ ও অমল হালদার নামে দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে শান্তিপুর থানার সামনে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পরে মিছিল করে বাইগাছি মোড় গিয়ে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করে তারা। বিকেলে জেলার নেতাদের সঙ্গে গিয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে খেয়ে-দেয়ে সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘরে শুতে চলে গিয়েছিলেন তাঁতের সুতোর ব্যবসায়ী বিপ্লব। ঘরের দরজা তখনও খোলাই ছিল। পাশের ঘরে ছিল তাঁর ছেলে ও ভাইপো। বাড়ির সামনে উঠোন পেরিয়ে রাস্তা। পাশেই লাগোয়া বাড়িটি বিপ্লবের সেজো ভাই অরূপ সিকদারের। বিপ্লবের স্ত্রী শঙ্করী পুলিশকে জানিয়েছেন, বাড়ির সামনে মুখ ঢাকা কয়েক জনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি সেজো দেওরকে ডাকতে যান।

কিন্তু তাঁরা আর আসার সময় পাননি। অরূপের বাড়ি থেকেই তাঁরা তিনটি গুলির শব্দ পান। শঙ্করীর কথায়, “ছুটে এসে দেখি, চার জন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ভিতরে আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে।” পুলিশ জানায়, খুব কাছ থেকে পরপর তিনটি গুলি করা হয়েছে বিপ্লবকে। গুলির শব্দ আর চিৎকারে পড়শিরাও ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে খুনিরা পালিয়ে গিয়েছে।

কেন এই খুন?

বিজেপির দাবি, ভোটের দিন ওই এলাকার বুথটি দখল করার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। শান্তিপুর শহর থেকে আসা বাইক-বাহিনী হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা বাধা দেন। সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন মহিলারাও। শুরু হয় বোমাবাজি। কিন্তু শেষমেশ বুথটি দখল করা যায়নি। মূলত বিপ্লবের কাঁধে ভর দিয়েই প্রথম বার জন্য ওই বুথে জয়ী হয়েছে বিজেপি।

কিন্তু অশান্তিটা তলায়-তলায় ধোঁয়াচ্ছিল। ভোটের দিন তৃণমূলের তিন জন ইটের ঘায়ে আহত হয়েছিল। তার জেরে হামলা-পাল্টা হামলার ধারা যাতে চলতে না থাকেত তার জন্য নির্বাচনের এক দিন পরেই স্কুলের মাঠে বৈঠকে বসেছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেই ডাকা হয়েছিল। সেখানে ঠিক হয়, ভোট নিয়ে কোনও অশান্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

কিন্তু ফল বেরনোর পর পরিস্থিতি ফের তেতে উঠতে থাকে। বিপ্লবের প়ড়শি, পঁচাত্তর বছরের শ্রীপদ বিশ্বাস বলেন, “অনেক ভোট দেখেছি। এই এলাকায় কখনও সামান্য গন্ডগোলও হতে দেখিনি। যাতে হানাহানি না হয় তার জন্যই সব দলের লোকজনকে নিয়ে শান্তি বৈঠক করেছিলাম।”

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই তাঁদের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। বিজেপির নদিয়া (দক্ষিণ) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, “বিপ্লবের নেতৃত্বে আমাদের কর্মীরা তৃণমূলের বুথ দখল রুখে দেওয়াতেই আক্রোশে এই খুন।” বিপ্লবের মেয়ে দেবিকা মাহাতোর অভিযোগ, “আমার বাবাকে খুনের পিছনে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের হাত আছে। যে ভাবেই হোক উনি এই বুথটা দখল করতে চেয়েছিলেন।”

বারবার ফোন করা হলেও অরিন্দম ধরেননি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত দাবি করেন, “সম্পুর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের দল খুনের রাজনীতি করে না।” পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে জানান, তল্লাশি চলছে। তবে খুনের কারণ স্পষ্ট নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

after vote violence leader killed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE