প্রতীকী ছবি।
হাসপাতালই, আবার ঠিক হাসপাতাল নয়। শয্যা থাকছে বটে, সঙ্গে শিশুদের খেলাধুলো করার জায়গাও। সঙ্গে থাকবেন শিশুর মা-ও। ওয়ার্ডের সঙ্গেই থাকছে হেঁশেল। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য সেখানেই রান্না হবে পুষ্টিকর খাবার। যত দিন না স্বাস্থ্য ফিরবে শিশুটির, তত দিন হাসপাতালের ওই বিশেষ ওয়ার্ডেই রাখা হবে তাকে।
নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নতুন প্রকল্পে গড়া এই কেন্দ্রটির নাম ‘পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র’। পাইলট হিসেবেই প্রকল্পটি চালু হচ্ছে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। থাকছে ১০টি শয্যা। খরচ বহন করবে জেলা পরিষদ। বেশ কয়েকটি ধাপে পরীক্ষার পরে বিশেষ শিশুদের নির্বাচিত করা হবে।
নদিয়ায় সবে মাত্র এই প্রকল্প চালু হলেও পাঁচ বছর আগেই এই রাস্তায় নেমে পড়েছে মুর্শিদাবাদ। সুতি ২-এর মহেশাইল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সমশেরগঞ্জে অনুপনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ন’টি করে। এ বার আরও দু’টি পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু হবে। নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা করে খাবার রান্না হবে। তার জন্য এক রাঁধুনি ও চার সহায়িকা নিয়োগ হয়েছে। থাকছেন এক সমাজকর্মীও। মায়ের পাশাপাশি শিশুর পরিবারের অন্য সদস্যদের কাউন্সেলিং করবেন তিনি। সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে কী ভাবে সস্তায় পুষ্টিকর খাবার বানানো যায়, তাও সেখানে হাতে-কলমে শেখানো হবে।
এমনিতে সব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই নিয়মিত শিশুদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়। সেখানেই অপুষ্ট শিশুর তালিকা তৈরি হবে। অপুষ্টিই আসল কারণ, নাকি শারীরিক অসুস্থতা বা পারিবারিক কোনও কারণে শিশু আকাঙ্ক্ষিত মান ছুঁতে পারছে না, তা দেখা হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নানা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। তাতেও যাদের স্বাস্থ্য ফিরবে না, তাদেরই আনা হবে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এই শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। মায়েরা যত দিন সন্তানের সঙ্গে হাসপাতালে থাকবেন, প্রতি দিন তাঁদেরও ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। বাড়ি ফেরার সময়ে দেওয়া হবে আড়াইশো টাকা। সঙ্গে ‘ফুড কুপন’। সেই কুপন দিয়ে যত দিন প্রয়োজন, রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে শিশুটির জন্য চাল ও আটা জোগান দেওয়া হবে।
গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ‘লাল বাচ্চা’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। লাল এখানে সবচেয়ে বেশি বিপদের প্রতীক। গত জুন মাস পর্যন্ত নদিয়ায় এ রকম লাল বাচ্চার সংখ্যা সাড়ে পাঁচশো, মুর্শিদাবাদে এক হাজার।
নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “আমরা প্রথমে জেলা হাসপাতালে একটি কেন্দ্র তৈরি করেছি। প্রয়োজনে কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে।” কান্দি ও ডোমকল হাসপাতালে পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ। শয্যা ১৬টি করে। হাসপাতাল কর্মীদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, “জেলায় আরও কিছু কেন্দ্র জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy