Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সপাটে চড়ের কথা ভুলব না

চড়টা খেয়েছিলাম ফেরার সময়। সপাটে। ভোটপর্ব শেষ। গাড়িতে উঠে পড়েছি। জানালার বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে। ভাবছি, কখন বাড়ি ফিরব। ঠিক সেই সময়ে— ঠাস!

সুরজিৎ ভট্টাচার্য (জীবন বিমা সংস্থার আধিকারিক)
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

চড়টা খেয়েছিলাম ফেরার সময়। সপাটে। ভোটপর্ব শেষ। গাড়িতে উঠে পড়েছি। জানালার বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে। ভাবছি, কখন বাড়ি ফিরব। ঠিক সেই সময়ে— ঠাস!

কথায় বলে সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর এক বার!

কিন্তু ভোট তো আর গঙ্গাসাগর নয়। এক, দুই করতে করতে মাইক্রো অবজার্ভার হিসেবেই এ বার তিন বার হয়ে গেল! তারও আগে প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে ভোট-মাঠে নামতে হয়েছে বেশ কয়েক বার। তবে সীমান্তে ভোটের দায়িত্বে এই প্রথম।

বাড়ি কলকাতায়। কর্মসূত্রে নবদ্বীপে। তবে সীমান্ত-ভোটের অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে।

২১ এপ্রিল ভোট। তেহট্ট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল আগের দিন বিকেলে। জনা ত্রিশেক ভোট-কর্মী নিয়ে পেল্লাই একটা ঝাঁকুনি দিয়ে চলতে শুরু করল ‘মহাদেব’(আমাদের বাসের নাম)। গন্তব্য নদিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা বারুইপোতা- রংপুর। সন্ধ্যার ঠিক আগে পৌঁছলাম নদিয়ার একদম শেষ প্রান্ত, রংপুরে। গ্রামের শেষে কাঁটাতারের বেড়া। ওপারেই বাংলাদেশ।

আমার দায়িত্ব ছিল রংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৪ নম্বর বুথের ভোট প্রক্রিয়া দেখভালের। থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ছোট্ট একতলা স্কুলবাড়িতেই। ছিমছাম। শৌচাগারও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বেরিয়ে পড়লাম রাতের খাবারদাবারের ব্যবস্থা করতে। সামনে বাঁশবন। মাথার উপরে চাঁদ। মনটাও যেন গুনগুনিয়ে উঠল প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, ‘‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই...।’’ মোবাইলে সে ছবিও তুলে রেখেছি। রাতের খাবার এল গ্রামের একটি মাত্র দোকান থেকে। রুটি, ডাল, ডিমের কারি। উফ্, লঙ্কা-পেঁয়াজে ভরপুর সেই খাবারের কথাও মনে থাকবে!

ভোটের দিন ভোর চারটে নাগাদ লোকজনের হইচই শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল— এই রে, কাকভোর থেকেই কি গণ্ডগোল শুরু হল নাকি? ভুল ভাঙল বাইরে এসে। দেখি তখন থেকেই গ্রামের লোকজন ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু ভোট তো শুরু হবে সাতটায়। পরে জানলাম, গ্রামের অধিকাংশ লোকজন সকালে বিএসএফের কাছে ভোটার কার্ড জমা রেখে কাঁটাতারের ও পারে খেতের কাজে যান। ভোট দিতে গিয়ে যাতে কাজ কামাই না হয়, সে জন্য কাকভোরেই এমন লাইন।

বিকেল তিনটের মধ্যে প্রায় সব ভোট পড়ে যায়। এক হাজার এক জনের মধ্যে ৯০১ জন ভোট দিয়েছেন। কোনও গণ্ডগোল হয়নি। খুশি মনে সন্ধ্যা নাগাদ তেহট্টের উদ্দেশে রওনা দিলাম। জানলার ধারে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বসে আছি। হঠাৎ গালে সপাটে এক চড়। চমকে উঠেছিলাম। গালে হাত বুলিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি সেই বাঁশবাগান। আর সরু কঞ্চিটা তখনও নড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election experience vote terror
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE