রেশনের আটা বণ্টন নিয়ে ফের কালোবাজারির অভিযোগ উঠল। বুধবার রানাঘাটের বাসিন্দা তরুণ পাল খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। নদিয়া জেলার খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ ধাড়ার কাছে এ দিন তিনি অভিযোগ জানান।
তরুণের অভিযোগ, রানাঘাটের ডিস্ট্রিবিউটর বিশ্বনাথ পালের মেয়ে জয়িতা পাল ঘুরপথে রেশনের আটা বিক্রি করছেন। জয়িতা পাল ওই ডিস্ট্রিবিউটরশিপের অংশীদার। তিনিই মূলত ব্যবসা দেখভাল করেন। কয়েক মাস আগে তাঁর বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছিল বলে সূত্রের খবর।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার আঁইশমালিতে বাকিবুর রহমানের মালিকানাধীন এনপিজি আটাকল বেশ কয়েক মাস আগে থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বকিবুর রহমান রেশন দুর্নীতির অভিযোগে জেলে যাওয়ার পর থেকে খাদ্য দফতর তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে। আগে জয়িতা পাল এনপিজি ময়দা মিল থেকে আটা নিতেন। তার পর সেই আটা নিয়ম অনুযায়ী রেশন ডিলারদের মাধ্যমে পৌঁছে যেত গ্রাহকদের কাছে।
তরুণের দাবি, জয়িতা পাল এখন কল্যাণীর ‘শ্রী জগন্নাথ শিল্পোদ্যোগ’ নামে একটি আটাকল থেকে আটা তুলছেন। আটাকলটি বেশ কয়েক বছর ধরে খাদ্য দফতরের কাছ থেকে গম নিয়ে তা ভাঙিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরকে আটা দিচ্ছে। তরুণের অভিযোগ, রেশনের আটা মিহি হয় না। ফলে অনেক উপভোক্তা ওই আটা সংগ্রহ করে ফের তা রেশন ডিলারকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। উপভোক্তারা আবার ওই আটা ১৮ টাকা কেজি দরে অনেক সময় রেশন ডিলারদের বিক্রি করে দিচ্ছেন। ডিলারদের কেজি প্রতি দুই টাকা বাড়তি দাম দিয়ে জয়িতা পাল ওই আটা কিনে নিচ্ছেন। ঘুরপথে ওই আটা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আটাকল বা খোলা বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন তিনি।
খাদ্য দফতরের সঙ্গে বহু বছর ধরে ব্যবসা করছেন এমন এক জন জানাচ্ছেন, সরকার আটাকলে গম দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি একশো কেজি গমের বিনিময়ে আটাকল ৯৫ কেজি আটা দেয় ডিস্ট্রিবিউটরকে। অনেক সময়েই দেখা যায়, কলের মালিক ঘুরপথে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আটা কিনে নেন। আর সরকারের দেওয়া গম অনেকটা বেশি দামে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। এ ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলে ওই ব্যবসায়ীর সন্দেহ।
রানাঘাটের এক রেশন ডিলার জানাচ্ছেন, তাঁরা গ্রাহকদের ন্যায্য আটা দিয়ে দেন। তার পরে কোনও কোনও গ্রাহক ওই আটা মিহি নয় দাবি করে তা ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দেন। সেই সব আটার একটা অংশ প্রভাবশালী ডিস্ট্রিবিউটর কিনে তা খোলা বাজারে বা আটাকল মালিকের কাছে বেচে দেন। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে জয়িতা পাল বলেন, “খাদ্য দফতর জানতে চাইলে যা উত্তর দেওয়ার দেব।” নদিয়া জেলা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ ধাড়াকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)