Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কলকাতার কেতায় পোক্ত খুঁটি

একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন রাজা-জমিদার কিংবা বনেদিবাড়িতে রথযাত্রা বা অন্য কোনও বিশেষ তিথিতে ধুমধাম করে শুরু হত পুজো প্রস্তুতি। বলা হতো পাটপুজো বা কাঠামো পুজো। পুজো মণ্ডপের প্রথম খুঁটি পোঁতাকে উৎসবের রূপ দিতে গিয়ে সেই পুরানো প্রথাকেই একটু অদলবদল করে ‘খুঁটিপুজো’ আবিষ্কার করেছে বাঙালি।

পুজো: বহরমপুরে  নিজস্ব চিত্র

পুজো: বহরমপুরে নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌতম প্রামাণিক
নবদ্বীপ ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

ক্রমশ শক্ত হচ্ছে খুঁটি। বহরমপুর থেকে বাদকুল্লা, খুঁটির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতার নামী পুজোর উদ্যোক্তারা পুজোর মাস তিন চারেক আগে একটা শুভ দিন দেখে দুর্গাপুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘোষণা করেন। পোশাকি নাম খুঁটি পুজো। থিমের পুজোর প্রচলন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার শারদোৎসবের নান্দীমুখ হয়ে ওঠে এই খুঁটিপুজো। নামী শিল্পী বা ভাস্করদের পাশে বসিয়ে উদ্যোক্তারা সাড়ম্বরে ঘোষণা করেন তাঁদের থিম থেকে বাজেট। ঠিক তখনই যেন পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে।

কলকাতার কেতা এ বার জেলার মফস্সল ও শহরগুলোতেও। নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, বহরমপুরের মতো জায়গায় বড় বাজেটের একাধিক পুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা হচ্ছে খুঁটিপুজো করে। বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই বেছে নিয়েছিলেন রথযাত্রার দিনটি। নবদ্বীপের আজাদ হিন্দ ক্লাব, মণিপুর দুর্গাপুজো কমিটি বা বহরমপুরের কাঠমাপাড়া দুর্গাপুজো কমিটির তরফে এ দিন থেকেই পুজোর প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। বহরমপুর লোয়ার কাদাইয়ের দুর্গাপুজোর আয়োজকেরা আবার রথেরও কয়েক দিন আগে তাঁদের পুজো সেরে ফেলেছেন। উল্টো রথেও খুঁটি পুজোর পরিকল্পনা রয়েছে অনেকের।

একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন রাজা-জমিদার কিংবা বনেদিবাড়িতে রথযাত্রা বা অন্য কোনও বিশেষ তিথিতে ধুমধাম করে শুরু হত পুজো প্রস্তুতি। বলা হতো পাটপুজো বা কাঠামো পুজো। পুজো মণ্ডপের প্রথম খুঁটি পোঁতাকে উৎসবের রূপ দিতে গিয়ে সেই পুরানো প্রথাকেই একটু অদলবদল করে ‘খুঁটিপুজো’ আবিষ্কার করেছে বাঙালি। হালে কলকাতা ছাড়িয়ে জেলার দিকে পা বাড়িয়েছে খুঁটি।

বহরমপুরের লোয়ার কাদাই দুর্গাপুজোর অন্যতম আয়োজক গৌতম রায় যেমন বলেন, “গত বার পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল খুঁটি পুজো দিয়েই। সেটাই প্রথা হয়ে গেল। এ বার ৭৬তম বছরেও আমরা পঞ্জিকা মেনে নির্দিষ্ট দিনে খুঁটি পুজো করেছি।”

ছিয়ানব্বই বছরের কাঠমাপাড়ার উদ্যোক্তাদের তরফে সুরজিৎ বাগচি বলেন, “বড় যুদ্ধের আগে সবাই মিলে একজোট হয়ে প্রস্তুতি নিতেই এই আয়োজন।” পয়লা বৈশাখ থেকে পুজো প্রস্তুতি শুরু করেছে মণিপুর দুর্গাপুজো কমিটি। তারাও কিন্তু রথের দিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বারের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করলেন। কমিটির সম্পাদক মানস সাহার কথায়, ‘‘বাজেট থেকে মণ্ডপ সব কাজই এপ্রিলে শুরু হয়েছে। রথের দিন সেই সব বিষয় এলাকার মানুষকে জানিয়ে তাঁদের মতামত শুনতেই এই খুঁটি পুজো।’’

নবদ্বীপ আজাদ হিন্দ ক্লাব আবার খুঁটি পুজোর দিনেই মণ্ডপ, প্রতিমা এবং আলোকশিল্পীকে অগ্রিম টাকাও দিয়েছেন। ক্লাবের তরফে শুভাশিস কংসবণিক জানান, উৎসবের মেজাজটাই তো এই খুঁটি পুজো থেকেই শুরু হয়।

আর কে না জানে, মেজাজটাই আসল রাজা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Durga Puja Celebration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE