Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Dengue

বেসামাল হচ্ছে ডেঙ্গি পরিস্থিতি

এই বছর বর্ষার শুরু থেকেই রানাঘাট শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় লাফিয়ে বাড়ছিল ডেঙ্গি-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

তিল ধরনের জায়গা নেই রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। এক শয্যায় দুই বা তার বেশি সংখ্যায় রোগী। মেঝেয় রেখেই চলছে চিকিৎসা। রবিবার। ছবি: সুদেব দাস

তিল ধরনের জায়গা নেই রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। এক শয্যায় দুই বা তার বেশি সংখ্যায় রোগী। মেঝেয় রেখেই চলছে চিকিৎসা। রবিবার। ছবি: সুদেব দাস sudevdas123@gmail.com

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৯:২১
Share: Save:

ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে রানাঘাটের ডেঙ্গি পরিস্থিতি। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা। পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন বিভাগে তিলধারণের জায়গা নেই। মেঝেয় রোগী ভর্তি রেখে কোনও মতে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এই বছর বর্ষার শুরু থেকেই রানাঘাট শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় লাফিয়ে বাড়ছিল ডেঙ্গি-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার নেবে, তা আন্দাজ করতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসন। ডেঙ্গি আক্রান্তের নিরিখে রাজ্যের শহরগুলির মধ্যে রানাঘাট এখন প্রথম স্থানে রয়েছে। সূত্রের খবর, শুধুমাত্র জুন মাসেই রানাঘাট পুরসভা এলাকায় ৬৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান যদি এটা হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে বাস্তব চিত্র এর চেয়েও প্রায় তিন গুণ বেশি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি-আক্রান্ত অনেক রোগী রয়েছেন, যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে চিকিৎসা করিয়েছেন। অনেকে আবার ডেঙ্গির সমীক্ষা চলাকালীন নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গোপন রেখেছেন।

রবিবার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন বিভাগে পা ফেলার জায়গা নেই। বেশির ভাগ রোগীরাই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যে শয্যায় এক জন রোগীর থাকার কথা, সেখানে কোথাও দু’জন, কোথাও আবার তিন জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। অনেক রোগীদের শয্যা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝেয় রাখা হয়েছে। এক লাফে রোগী ভর্তির সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়ালেও বৃদ্ধি পায়নি চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা। ফলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, ‘‘প্রতি দিন হাসপাতালে গড়ে ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়। কিন্তু গত শনিবার দিনই প্রায় একশোর কাছাকাছি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই জ্বরে আক্রান্ত। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আমাদের কাছে সত্যিই কঠিন হয়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করেছি।’’

কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল?

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে ডেঙ্গি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ ভ্রমণের ইতিহাস মিলেছিল। কিছু দিন আগে রাজ্য স্তর থেকে পাঁচ পতঙ্গ বিশেষজ্ঞের একটি প্রতিনিধি দল রানাঘাট শহরে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে, নমুনা সংগ্রহের কাজ করে। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরের নিকাশি নালা ও জঞ্জাল থেকে ডেঙ্গি লার্ভার উল্লেখ মেলেনি।

বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিএসএনএল অফিসের বাইরে ফেলে দেওয়ার যন্ত্রাংশ দীর্ঘ দিন জমে রয়েছে। মূলত, ওই অফিস ডেঙ্গির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকেই ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত বলে মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা ও সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে।’’

তবে শহরের অনেক জায়গাতেই নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল বলে অভিযোগ করছে বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার নিকাশি নালা দীর্ঘ দিন পরিষ্কার হয় না। নোংরা জমে নালা উপচে পড়েছে। সেখানেও মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। শহর পরিষ্কার রাখতে পুরসভার আরও বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE