খুদু দাস এবং মনোজ পাল।
টানা দেড় বছর ধরে এলাকায় পঞ্চায়েতের কোনও উন্নয়ন হয়নি। আর তাতেই নাজেহাল অবস্থা খড়গ্রাম ব্লকের খড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের।
কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের অসযোগিতার জন্যই ওই উন্নয়নের কাজ থমকে রয়েছে। অভিযোগের স্বীকারও করছে তৃণমূল।
ওই পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ১৩টি। গত পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস ৯টি, তৃণমূল ২টি ও সিপিএম ২টি আসনে জেতে। বোর্ড গঠনের আগেই কংগ্রেসের ছয়জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। কংগ্রেসত্যাগী তৃণমূলের সদস্য বনয়ারা বিবি প্রধান হন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ওই প্রধানের কাজে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে চারজন সদস্য ফের কংগ্রেসের ফিরে বনয়ারার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। অনাস্থা ভোটে হারে তৃণমূল। প্রধান হন সরিফুল ইসলাম। মাস চারেক পর কংগ্রেসে ফিরে আসা চার সদস্য ফের তৃণমূলে যোগ দেন। সঙ্গে সিপিএমের এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় ওই পঞ্চায়েতে সরিফুলের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারছে না তৃণমূল। আর কংগ্রেসের প্রধানকে পদ থেকে সরাতে না পেরে উন্নয়নের প্রশ্নে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছে তৃণমূল সদস্যরা।
ঘন ঘন এই অচলাবস্থার জেরে ওই পঞ্চায়েতে গত দুই আর্থিক বছরে কোনও উন্নয়নই হয়নি। পঞ্চায়েতে উন্নয়ন খাতে ৭০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। সে টাকা খরচই হচ্ছে না। খড়গ্রামের বিডিও খুরশেদ আলম বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা মেটানার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওই বৈঠকে কেউ আসেননি।’’
ওই পঞ্চায়েতে হাজার দশেক লোকের বাস। ২০১৫ সাল থেকে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় উন্নয়নের সব কাজই থমকে রয়েছে। নতুন করে কোনও রাস্তা তৈরি হচ্ছে না। খানাখন্দে ভরপুর গ্রাম্য রাস্তার সংস্কারও হচ্ছে না। পানীয় জল নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। সে সব সারানোর নামেও কোনও কথা নেই। এলাকার জঞ্জালও সাফ হচ্ছে না।
পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১৪০টি নলকূপ রয়েছে। বিকল হয়ে পড়ে রযেছে ৮০টি নলকূপ। পঞ্চায়েত অফিসের সামনেই একটি নলকূপ থেকে জল পড়ছে না। কাজীপাড়া গ্রামে দশটি নলকূপ থেকেই একফোঁটাও জল পড়ছে না। দিনকয়েক আগে বাধ্য হয়ে গ্রামের লোকজন চাঁদা তুলে দু’টি নলকূপ মেরামত করেছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা রশিদ শেখ, পচাই শেখরা বলেন, “গ্রামের একটি মাত্র রাস্তা। মাটির তৈরি। সেই রাস্তা বর্ষায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাটি উঠে গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা সে দিকে নজর দেয় না। একই অবস্থা পানীয় নলকূপগুলিরও। নিজেরাই চাঁদা তুলে দু’টি নলকূপ সারিয়েছি।’’
পঞ্চায়েত কার্যালয়ের সামনে রাস্তার একপাশে পাকা নর্দমা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন তা সাফাই না হওয়ার কারণে নর্দমা ভর্তি হয়ে গিয়েছে। নর্দমা উপচে নোংরা জল রাস্তায় পড়ছে। ফলে বছরভর রাস্তায় কাদা জমে থাকে। এতে এলাকায় দূষণও ছড়াচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা রেহেউল শেখ বলেন, “নর্দমাগুলি সাফ করা হয় না। এ যেন নরকে রয়েছি। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে বার বার বলেও কোনও কাজ হয়নি।’’
ওই পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন পঞ্চায়েতের বাজেট তৈরিতে ক্রমাগত বাধা দিচ্ছে। ফলে উন্নয়নের কাজ থামকে রয়েছে। পঞ্চায়েতে ৭০ লক্ষ টাকা পরে রয়েছে। অথচ কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছি না। তৃণমূলের সদস্যদের নিজের নিজের এলাকায় উন্নয়ন করতে উদ্যোগী হতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা সে সবে কান দিতে নারাজ।’’ ওই পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের জগন্নাথ সিংহ অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, তাঁদের জন্যই পঞ্চায়েত বাজেট পাশ হয়নি। কংগ্রেসের প্রধানের হাত ধরে এলাকায় উন্নয়ন হোক এটা তাঁরা চান না। আর মাস আটেক আগে ওই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হবে। নতুন প্রধান নির্বাচিত না হওয়া অবধি প়়ঞ্চায়েতে কোনও কাজ হবে না।
কিন্তু পরিষেবা না পেয়ে এলাকার মানুষ যে সমস্যায় পড়ছেন? তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে নারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy