পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একাংশকে দলে টেনে নিজেই পিছু হটল বিজেপি। আর তাতে জট কাটার বদলে অবস্থা আরও ঘোরালোই হল।
অন্য কোনও দল বা সংগঠন পাশে না দাঁড়ানোয় বুধবারই প্রায় সাড়ে পাঁচশো বাসকর্মী বিজেপির ছত্রচ্ছায়ায় এসেছে। আর তারই সৌজন্যে বাসের কর্মীদের মধ্যে প্রথম সংগঠন খুলতে পেরেছে তারা। অথচ বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডের সভায় দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ঘোষণা করে দিলেন, ‘‘আরটিও সাহেব ধৃত বাস চালকের জামিনের বিষয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। কাল থেকে আমরা বাস চালাব।” যা শুনে আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) সৌমিত্র বিশ্বাস বলেন, “ওই বাসচালক জামিন পাবেন কি না তা আদালতের বিষয়। আমি দায়িত্ব নেব কী করে? আমি এমন কোনও কথাই বলিনি!’’
তেহট্টে বাস দুর্ঘটনায় ন’জনের মৃত্যুর পরে চালক ইন্দ্রজিৎ সর্দারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে টানা সাত দিন কৃষ্ণনগর থেকে জেলার সমস্ত রুটে বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন কর্মীরা। তৃণমূল অনুগামী আইএনটিটিইউসি গোড়া থেকেই এর বিরোধিতা করছে। প্রথমে নৈতিক সমর্থন জানালেও সিটু এবং নকশালপন্থীদের শ্রমিক সংগঠন এআইসিসিটিইউ জনতার ভোগান্তির কথা ভেবে পরে সরে গিয়েছে।
এই অবস্থায় বাসকর্মীদের ‘পাশে থাকা’র কথা বলে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছিল বিজেপি। তাতে প্রাথমিক ভাবে কাজও হয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনরোষ এবং প্রশাসনের কড়া অবস্থানের মুখে এই আন্দোলন আরও দু’সপ্তাহ টিকিয়ে রাখা যে প্রায় অসম্ভব তা প্রায় স্পষ্ট। অথচ পরের হাজিরায় যদি ইন্দ্রজিৎ জামিনে ছাড়াও পান, তা ঘটতে আরও ১৩ দিন বাকি। আর সে কথা বুঝেই বিজেপির এই ভোলবদল বলে মনে করছেন বাস চালকদের একটা বড় অংশ।
এ দিন আরটিও বৈঠকে ডাকতেই কার্যত সুযোগটা সামনে এসে যায় বিজেপি নেতাদের। ওই বৈঠক থেকে এসেই দিলীপ ঘোষ মঞ্চে ঘোষণা করে দেন, শুক্রবার থেকে বাস চলবে। সঙ্গে-সঙ্গে সমবেত শ্রমিকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া কর্মীরা বলতে থাকেন, “আমাদের সঙ্গে কথা না বলে উনি এ কথা ঘোষণা করছেন কী করে? আমরা এটা মানব না।” এই ক্ষোভের কথা পৌঁছে দেওয়া হয় মঞ্চে নেতার কানে। বেগতিক বুঝে তিনি একটা কাগজ দেখিয়ে দাবি করেন, “রাতে ফের আমাদের সঙ্গে আরটিওর বৈঠক আছে। সেখানে মালিক ও প্রশাসন যদি আপনাদের দাবি মেনে নেন, তা হলে কাল থেকে বাস চালান।”
যা শুনে প্রায় আকাশ থেকে পড়ে আরটিও বলেন, ‘‘যা বৈঠক হওয়ার, তা বিকেলেই হয়ে গিয়েছে। রাতে আর কোনও বৈঠক নেই।” সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, শুক্রবার সকাল থেকে বাস না চললে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। মালিকদের শো-কজের চিঠি তৈরি হচ্ছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “বাস কী ভাবে চালাবেন সেটা মালিকদের বিষয়। কারণ আমরা ওঁদেরই পারমিট দিই। ওঁরাই বুঝবেন, কোথা থেকে চালক আনবেন। বাস চালাতেই হবে।”
প্রশাসনের মনোভাব বুঝে দিনভর শ্রমিক ও প্রশাসনের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছেন মালিকেরা। যদিও রাত পর্যন্ত সমাধান সূত্র বেরোয়নি। মানিক শেখ নামে এক চালক বলেন, “তৃণমূল তো প্রথম থেকে একই কথা বলে আসছে। তা হলে কেন আমরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এলাম? ইন্দ্রজিৎ জামিন না পাওয়া পর্যন্ত বাস চালাতে রাজি নই।” আবার করিমপুর রুটের এক বাস চালক বৃন্দাবন সরকার বলেন, “দিলীপবাবু বলে গিয়েছেন বাস চালাতে। মালিক আর প্রশাসন পাশে থাকলে আমরা বাস চালাতে রাজি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy