সুদীপ্ত মণ্ডল ও মৌমিতা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
একটা তলিয়া যাওয়া বাস, জানলা গলে ভেসে ওঠা কয়েকটা মুখ, বাড়িয়ে দেওয়া কয়েকটা হাত।
শীতের সকালে সেই বাঁচিয়ে তোলার নিবিড়তায় ওঁরা কেউ হয়েছেন দিদি, কেউ বা কারও ভাইপো।
অথচ, এক বছর আগেও সেই কুয়াশা-নিবিড় ভোরের আগে তাঁরা কেউ কাউকে চিনতেন না। আর এখন, এ-ওর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন রূপোলি পার্শে, ও বাড়ি থেকে আসছে পুজোর শাড়ি। বালিরঘাটে সেই দুর্ঘটনাই ওঁদের মধ্যে যেন রক্তের সম্পর্ক এঁকে দিয়েছে।
বালিরঘাট সেতুর পাশেই ভাণ্ডারদহের পাড়ে সুদীপ্ত মণ্ডলের বাড়ি। তাঁর ছোট্ট খাবার দোকানটাও বিলের কোল ঘেঁষেই। ঘটনার দিন, ডুবন্ত যাত্রীদের আর্ত চিৎকারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেছিলেন বিলের গহীন জলে হাবুডুবু খাচ্ছে কয়েকটি মাথা। সুদীপ্ত বলছেন, ‘‘দেরি না করে না করে আমার পড়শি প্রীতম পালকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা ভাসাই বিলের জলে। একে একে টেনে তুলেছিলাম তিন জনকে।’’ তাঁদের মধ্যেই ছিলেন মৌমিতা মণ্ডল। সুদীপ্তর বাড়িতেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছিল। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন সুদীপ্তই।
ডোমকলের জয়রামপুরের মৌমিতা সে দিন মালদহে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। বলছেন, ‘‘আমার এক ভাই আছে। কোনও দাদা ছিল না। বালিরঘাটের ঘটনা অন্তত একটা দাদা দিল, যে বোনের প্রাণ বাঁচায়!’’ সলজ্জ সুদীপ্ত বলছেন, ‘‘আমার কোনও দিদি-বোন ছিল না। বালিরঘাটের জল থেকে অন্তত একটা বোন পেলাম!’’
বালিরঘাট কুমোরপাড়ার সুকুমার হালদার সে দিন বিল থেকে ৬ জনকে উদ্ধার করেছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন ডোমকলের এক মহিলা। সেই প্রাণ-বাঁচানো ভোরের পর দু’বাড়ির ঘোর আলাপ এখন। এ বাড়ি থেকে রুপোলি পার্শে পাড়ি দেয় তো ও বাড়ি থেকে পুজোর পোশাক। করিমপুরের সুন্দলপুরের সাধন মণ্ডলের সঙ্গেও এখন কাকা-ভাইপোর সম্পর্ক সুকুমারের।
সুকুমার বলছেন, ‘‘কালীপুজোয় সুন্দলপুরে সাধনের বাড়ি গিয়ে ক’দিন কাটিয়েও এলাম। সাধনও এ বাড়িতে এসে বলে, ‘কী কাকা, মুড়ি মাখ!’’ সাধন বলছেন, ‘‘সাঁতার জানি না। বিলে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। বাঁচব ভাবিনি। উনি হাতটা না বাড়ালে....নাহ, ভাবতে পারছি না।’’ কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করেন সাধন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy