Advertisement
E-Paper

ভয়ের নাম পানি-কেস

পুলিশের দেওয়া ‘পানি-কেস’ তাদের ‘ধান্দা’ খারাপ করে দিয়েছে বলে আফশোসের শেষ নেই নদিয়া আর মুর্শিদাবাদের মাদক কারবারিদের!

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০০:৩৪
মাদক-বিরোধী পদযাত্রা। মঙ্গলবার বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

মাদক-বিরোধী পদযাত্রা। মঙ্গলবার বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

পুলিশের দেওয়া ‘পানি-কেস’ তাদের ‘ধান্দা’ খারাপ করে দিয়েছে বলে আফশোসের শেষ নেই নদিয়া আর মুর্শিদাবাদের মাদক কারবারিদের!

এক সময় এই দুই জেলায় বিঘের পর বিঘে জমিতে আফিম চাষ হত। সেখান থেকে তৈরি হত হেরোইন। আফিম চাষে পুলিশ রাশ টানার পরেও রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ থেকে হেরোইনের কাঁচামাল উত্তরবঙ্গ হয়ে রেলপথ ও সড়কপথে মুর্শিদাবাদে ঢুকতো। বছর তিনেক আগে সেই কারবার নিয়ে পুলিশ তুমুল কড়াকড়ি শুরু করে। চার দশক আগে শুরু হয়েছিল হেরোইনের কারবার।

বছর তিনেক আগে সেই কারবারে রাশ টানতে উদ্যোগী হয় মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। বিশেষ করে গত দেড় বছর মাদক পাচার বন্ধে পুলিশ উদ্যোগী হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। যার ফলে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় মাদক পাচার অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বলে জেলার সাধারণ মানুষই স্বীকার করছেন। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে ‘পানি-কেস’ এর কথা।

মাদক হিসাবে একটি কাশির সিরাপ ব্যাপক হারে পাচার হয় এই দুই জেলার সীমান্ত দিয়ে। সাঙ্কেতিক ভাষায় স্থানীয়দের কাছে এর পরিচিতি ‘পানি’ হিসাবে। ‘দ্য নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রোপিক সাবস্টেন্স অ্যাক্ট’-এ কাশির সিরাপের পাশাপাশি হেরোইন ও অন্যান্য মাদক পাচারকারীদের গত দেড় বছর ধরেই পুলিশ পাকড়াও করে ব্যাপক হারে ‘কেস’ দিচ্ছে। এতে এক বার ধরা পড়লে জামিনও মেলে না। সাধারণ মানুষের কাছে এই মাদক আইনের নাম হয়ে গিয়েছে ‘পানি-কেস’। ‘পানি’ মানে এখানে শুধু কাশির সিরাপ নয়, বরং সব ধরনের মাদক বোঝানো হয়। এই ‘পানি-কেস’ এ পুলিশ এত লোককে ধরছে যে, মাদক কারবারীরাও সিঁটিয়ে রয়েছে।

মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় গত দেড় বছরে ৪৫ কেজি হেরোইন এবং প্রায় ৫০০ কুইন্ট্যাল হেরোইনের কাঁচামাল উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১২৫ জনকে। এর মধ্যে শুধুমাত্র লালগোলায় ৩৫ কেজি হেরোইন উদ্ধার হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে ১২১ জনকে। জেলায় গত দেড় বছরে ৫০৬০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৯৫ জনকে।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘এবছরও মুর্শিদাবাদে প্রায় ৪০০ একর জমিতে আফিম চাষ শুরু হয়েছিল। তবে শুরুতেই তা নষ্ট করে দেয় মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতর। জেলার সবটাই ফরাক্কার চর এলাকায় খাস জমিতে চাষ হয়েছিল। এক সময় ডোমকল জলঙ্গিতে গাঁজা চাষ হত। এ বছর আর তেমনটা হয়নি।’’

নদিয়ায় গত এক বছরে মাদক-সংক্রান্ত বিষয়ে মোট ১৬৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ১৮৮ জন। গাঁজা বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১১১৩ কেজি। ফেনসিডিল ১৫২০৬ বোতল, পোস্তোর খোসা প্রায় ৪৯৯ কেজি, আফিম ৭ কেজি ৮শো গ্রাম, হেরোইন ৩০ গ্রাম ও মরফিন বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ১৮ গ্রাম।

উত্তর নদিয়া এলাকার দশটি থানায় ২০১৫ সাল থেকে মোট মামলা হয়েছে ২৫০টি। গ্রেফতার হয়েছে ৩০০ জন। উদ্ধার হয়েছে ৪কেজি হেরোইন, ৪৫ কেজি আফিম ও প্রায় ৩১২ কেজি পোস্তোর খোসা।

জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “জেলায় নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান চলে। বহু লোক গ্রেফতার হয়েছে। প্রচুর মাদক দ্রব্য বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই হানা দেওয়া হচ্ছে।’’

(তথ্য সহায়তা: সুস্মিত হালদার)

Drug Dealers Drugs Drug Business
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy