Advertisement
E-Paper

আঁকশি যার, কাঠামো তার

ছিপছিপে গড়ন। বয়স, চোদ্দো থেকে আঠারোর আশেপাশে। খালি গা। পরনে হাফপ্যান্ট। কোমরে কষে বাঁধা গামছা। কারও এক হাতে চকচকে দা, কারও বা ধারালো চপার। অন্য হাতে লম্বা দড়ি, যার এক দিকে বাঁধা লোহার আঁকশি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৫
কাঠামো-দখল। কৃষ্ণনগরের জলঙ্গিতে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

কাঠামো-দখল। কৃষ্ণনগরের জলঙ্গিতে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

ছিপছিপে গড়ন। বয়স, চোদ্দো থেকে আঠারোর আশেপাশে। খালি গা। পরনে হাফপ্যান্ট। কোমরে কষে বাঁধা গামছা। কারও এক হাতে চকচকে দা, কারও বা ধারালো চপার। অন্য হাতে লম্বা দড়ি, যার এক দিকে বাঁধা লোহার আঁকশি। ঘাটের এক কোণে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ নজর বোলাচ্ছে চারপাশে।

প্রস্তুতিটা শুরু হয়ে গিয়েছিল নবমী নিশি থেকেই। দশমীতে সকাল দশটার মধ্যেই বিসর্জনের ঘাটে ঘাটে ওদের জমায়েত।

তার পর? ঠাকুর জলে পড়তে যা দেরি। ‘পুনরাগমনায় চ’ বলে পুজোবাড়ির লোক কিংবা বারোয়ারির মাতব্বরেরা প্রতিমা জলে ভাসিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা মিলন শীল, মাধব কুণ্ডু, গোপাল সরকারদের সম্পত্তি।

তীর বেগে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাতের দড়ির মাথায় লাগানো আঁকশিটা কোনও মতে একটা কাঠামোর সঙ্গে আটকাতে পারলেই কেল্লা ফতে। কাঠামোর দখল নেওয়া সম্পূর্ণ। আর চিন্তা নেই। তার পর দড়ি ধরে দু’তিন জন মিলে সেটা টেনে পাড়ে তুলে আনা তো ‘বায়ে হাথ কা খেল’। ফের শুরু আর একটা কাঠমো দখলের অপেক্ষা।

দশমীর সকাল থেকে পরের ক’টা দিন গঙ্গা, জলঙ্গির দু’পাড় জুড়ে প্রতিমার কাঠামো শিকারীদেরই রাজত্ব। সে নবদ্বীপে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে রাণীর ঘাট, ফাঁসিতলা ঘাট বা পূর্বপাড়ের মায়াপুর ঘাট হোক কিংবা জলঙ্গির পাড়ে কৃষ্ণনগর কদমতলা ঘাট বা স্বরূপগঞ্জ ঘাট, যা-ই হোক না কেন।

এমনিতে নদী পাড়ের মানুষ ওরা। বাপ-কাকারা কেউ নৌকা চলায় তো কেউ মাছ ধরে। জন্ম থেকেই জলের সঙ্গে ওদের ভারি ভাব। ঘণ্টার পর এর পর ষোলোর পাতায় ঘণ্টা নদীর জলে দাপিয়ে বেড়ানো ওদের প্রিয় খেলা। দুর্গাপুজোর মরশুমে সেই জলই ওদের উপরি কিছু উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়। স্বরূপগঞ্জে জলঙ্গির ধারে খড়ি ওঠা ভিজে শরীরে কাঠামোর বাঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে তপাই বিশ্বাস, নন্দ সরকার বলছিল, ‘‘স্থানীয় কুমোরবাড়িতে প্রতিমার ওই কাঠামোর খুব চাহিদা। জল থেকে তুলে কাঠামোর গা থেকে খড়-মাটি ফেলে দিয়ে শুকিয়ে সোজা কুমোর বাড়ি। বিক্রি হতে সময় লাগে না। অনেকে আগে থেকেই বায়না করে রাখেন।’’

Durga puja Immersion Durga structure
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy