ফসল বিমার কথা শুনে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন! তার পরে কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে অবাক হয়ে বললেন, ‘‘ফসলেরও বিমা হয় নাকি! কই, কেউ তো কোনও দিন বলেনি।’’ ডোমকলের চাষি আব্দুল মান্নানের সংযোজন, ‘‘বিষয়টি জানা থাকলে এ বারেই আবেদন করতাম। দেখি খরিফ মরসুমে কিছু করা যায় কি না!’’
ওই চাষি একা নন, জেলা জুড়ে বহু চাষি এখনও পর্যন্ত ফসল বিমার বিষয়টিই জানেন না। মুর্শিদাবাদে প্রায় ৬ লক্ষ কৃষক পরিবার রয়েছে। সেখানে এ বছর রবি মরসুমে মাত্র এক লক্ষ ৯৪ হাজার কৃষক পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এটাই সর্বোচ্চ। তার পরেও জেলার বড় সংখ্যক কৃষক এ বারেও এই প্রকল্পের বাইরে থেকে গেলেন।
কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এক দিকে সচেতনতার অভাব, অন্য দিকে ফসল বিমা করেও সঠিক ভাবে ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, এই দুইয়ের কারণে বিমার বিষয়ে কৃষকদের অনীহা রয়েছে।
অথচ কৃষি দফতরের দাবি, ফসলবিমার বিষয়ে চাষিদের সচেতন করা হয়, প্রচারও চলে।
তা হলে এমন অবস্থা কেন?
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডু বলছেন, ‘‘সচেতনতার অভাবে এবং বিগত বছরগুলিতে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, প্রায় এক লক্ষ কৃষক আানাজ ও বাগিচা চাষ করেন। আবার অনেক চাষি অন্যের জমি মুখের কথায় চাষ করেন। ফলে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। এ সব বাদ দিলে দেখা যাবে জেলার প্রায় অর্ধেক কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা গিয়েছে। আগামী দিনে বাকি কৃষকদের এই প্রকল্পে আনা হবে।
বছরভর মাঠে ফসল থাকে। অনেক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে নষ্ট হয় ফসল। ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চাষিকে। পরবর্তী ফসল চাষ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন তাঁরা। অথচ, বিমার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার জন্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা (রাজ্যে, বাংলা ফসলবিমা যোজনা)।
নিখরচায় এই বিমার ব্যবস্থা থাকলেও চাষিদের তরফে সে ভাবে সাড়া মিলছে না। ২০১৭ সালে খরিফ মরসুমে সবথেকে বেশি (১২.৫ শতাংশ) কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় এসেছিলেন। চলতি বছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩২.৩৩ শতাংশ।
গত বছর রবি মরসুমে যেখানে ৩৫ হাজার কৃষক পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় এসেছিল, সেখানে এ বছর রবি মরসুমে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। অন্য বছরগুলির তুলনায় কৃষকের সংখ্যা বেশি হলেও পর্যাপ্ত নয়। এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক এই প্রকল্পের বাইরে থেকে গিয়েছেন।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদন করার সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছিল। ফলে বিগত বছরগুলির তুলনায় অনেক বেশি কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ২০১৭ সালের খরিফ ও ২০১৮ সালের রবি মরসুমে চাষে ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষতির জন্য বিমার টাকা চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। সেই বিষয়টি তুলে ধরে অন্য কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে।
এত দিন পর্যন্ত বিমার টাকা কেন্দ্র রাজ্য ও কৃষককে দিতে হত। কৃষি দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সাল থেকে কৃষকের প্রিমিয়াম রাজ্য সরকার দিচ্ছে। কৃষককে নিখরচায় বিমা করে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, এই প্রকল্পে কেন্দ্রের কোনও অর্থ নেওয়া হবে না। আগামী মরসুম থেকে প্রিমিয়ামের পুরো টাকাটাই দেবে রাজ্য সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy