Advertisement
২০ মে ২০২৪
দায় নিচ্ছে না টিএমসিপি

চিকিৎসক মারধরে গ্রেফতার ৪

চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে লালগোলা থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই পুলিশ তাদের ধরে। এর মধ্যে তিন জন লালগোলা কলেজের ছাত্র। তবে তাদের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে টিএমসিপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালগোলা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২০
Share: Save:

চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে লালগোলা থানার পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকালে লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই পুলিশ তাদের ধরে। এর মধ্যে তিন জন লালগোলা কলেজের ছাত্র। তবে তাদের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে টিএমসিপি।

বুধবার দুপুরে কিছু যুবক কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ সৌম্য সাহার উপরে চড়াও হয়ে তাঁকে এলোপাথাড়ি কিল-চড়-ঘুষি মারে। অভিযোগ টিএমসিপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আহত সৌম্যকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর গালে আটটি সেলাই পড়ে।

বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সৌম্য লালগোলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লালগোলা থানার ওসি বিপ্লব কর্মকার জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরেই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জনের নামে লিখিত অভিযোগে রয়েছে। আর এক জন কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতাল লাগোয়া দুর্গানগরের বাসিন্দা। ধৃতদের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাজে বাধা এবং মারধরের মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত করেছে। ঘটনার পরেই মুর্শিদাবাদ জেলা টিএমসিপি সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার দাবি করেছিলেন, হামলায় তাঁদের সংগঠনের কেউ জড়িত নয়। তিন জন যে কলেজের ছাত্র তা তিনি মেনে নিয়েছেন। লালগোলা ব্লক টিএমসিপি সভাপতি মাইনুল ইসলামেরও দাবি, তিন জন লালগোলা কলেজের ছাত্র হলেও তাঁদের সংগঠনের কেউ নন। ‘প্রকৃত তদন্ত’ করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে বারবার চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। গত ছ’মাসে মুর্শিদাবাদে তিনটি চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে, নদিয়ায় ঘটেছে দু’টি ঘটনা। গত ১ অগস্ট রাতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে এক রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়ির লোকজন কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করে। গত ৬ অক্টোবর আবার আজিমগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে শাসানি দেওয়া হয়েছিল— ‘স্যালাইনের সুঁচ ফোটাচ্ছ ফোটাও, এক ফোঁটা রক্ত বেরলে কিন্তু খুলি উড়িয়ে দেব।’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিয়ে সিএমওএইচ-এর কাছে বদলির আবেদন করেন। জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।

এর তিন দিন পরে, ৯ অক্টোবর জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এক যুবকের মৃতদেহ এনে বাড়ির লোকজন দাবি করেন— শুধু স্টেথো বসালে চলবে না, স্যালাইন চালিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। শাসানির মুখে পড়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সরকার চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

মাস ছয় আগে নদিয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালেও এক ডাক্তারকে নিগ্রহ করা হয়। রোগী দেখার সময়ে বাড়ির লোকজনকে বাইরে যেতে বলায় তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতালেই রোগী মারা গিয়েছেন বলে জানানোর পরে বাড়ির লোকজন চিকিৎসককে মারধর করা হয়। বাদ যাননি স্বাস্থ্যকর্মীরাও।

নদিয়ার সিএমওএইচ তাপস রায় বলেন, ‘‘এ সব যাতে না হয়, নজরদারি চালাতে হাসপাতালে সিসিক্যামেরা লাগানো হয়েছে।’’ মুর্শিদাবাদের সিএমওএইচ নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘নিগ্রহের ঘটনা ঘটতে থাকলে ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন চিকিৎসকরা।’’ এমনিতেই দুই জেলায় চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। সেখানে নিগ্রহের জেরে ডাক্তারেরা হাসপাতাল ছেড়ে পালালে আমজনতার কি লাভ কিছু হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beating Doctor Arrest Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE