Advertisement
২৫ মে ২০২৪

রেশন নিয়ে উত্তপ্ত গয়েশপুর

এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এমন ঘটনা গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ইদানীং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিষয়টির উপর নজর রাখতে শুরু করেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। নজর রাখছিল প্রশাসনও। যার নিট ফল—রবিবার রেশন সামগ্রী পাচার চক্র ধরা পড়ল কল্যাণীর গয়েশপুরে।

মজুত রেশন সামগ্রী। ডান দিকে, ঘটনাস্থলে মহকুমা শাসক স্বপন কুণ্ডু। — নিজস্ব চিত্র

মজুত রেশন সামগ্রী। ডান দিকে, ঘটনাস্থলে মহকুমা শাসক স্বপন কুণ্ডু। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০০:১০
Share: Save:

এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এমন ঘটনা গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ইদানীং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিষয়টির উপর নজর রাখতে শুরু করেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। নজর রাখছিল প্রশাসনও। যার নিট ফল—রবিবার রেশন সামগ্রী পাচার চক্র ধরা পড়ল কল্যাণীর গয়েশপুরে।

পুলিশ এ দিন অরুণ সমাদ্দার নামে এক মজুতদারকে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে তিন জনকে। এফআইআর করা হয়েছে পাঁচ রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে। খাদ্য দফতরের জেলা পরিদর্শকদের নিয়ে দিনভর একের পর এক রেশন দোকানে অভিযান চালান মহকুমা শাসক। সঙ্গে ছিলেন খাদ্য দফতরের পরিদর্শকেরা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০ বস্তা রেশন সামগ্রী।

দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকায় অভিযোগ উঠছিল যে, রেশন ডিলাররা পরিমাণে কম রেশন সামগ্রী দিচ্ছেন। খবর নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন, রেশনের চাল-গম-আটা ডিলারদের বাড়ি থেকে গয়েশপুরেই মজুত হচ্ছে। পরে নজরদারি করে তাঁরা জানতে পারেন, এলাকারই একটি বাড়িতে তা নিয়ে যাওয়া হয়।

দিনে-দুপুরে এতদিন তাঁরা কখনও ভ্যানে, কখনও ম্যাটাডোরে বস্তাবন্দি চাল-গম নিয়ে যেতে দেখেছেনও। কিন্তু, সেগুলি যে রেশন দোকান থেকে সেখানে আসছে তা বুঝতে পারেননি তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ সমাদ্দারকে এতদিন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেই জেনে এসেছেন এলাকার লোকজন। এ দিন অরুণের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় বস্তা বস্তা রেশন সামগ্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল আটটা নাগাদ গয়েশপুর যোগাযোগ মোড়ে একটি ভ্যানে করে সাত বস্তা আটা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দেখতে পেয়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ভ্যান চালককে আটকে জি়জ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন গয়েশপুর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের মরণ দে।

জেরায় ভ্যানচালক জানান, স্থানীয় অরুণ প্রামানিকের বাড়িতে তিনি আটার বস্তাগুলি নিয়ে যাচ্ছেন। জনতা এ বার হানা দেয় অরুণের বাড়িতে। তিনি তখন বাড়িতেই ছিলেন। স্থানীয় লোকজন দেখেন, অরুণের বাড়িতে রেশনের শতাধিক বস্তা চাল-গম মজুত রয়েছে। উত্তেজিত জনতা তারপরেই হইচই শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জেরায় অরুণ কবুল করেছেন, গয়েশপুরের সাত রেশন ডিলারের কাছ থেকে তিনি চাল-গম-আটা কিনে খোলা বাজারে তিনি বিক্রি করেন। তাঁকে পুলিশ আটক করে। পরে খাদ্য দফতরের কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাতের দিকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরই মধ্যে রটে যায়, কাছাকাছি একটি এলাকায় ম্যাটাডোরে করে চাল পাচার হচ্ছে। সেখানেও জনতা গাড়িটিকে আটক করে। চালক পালিয়ে যায়। খালাসিকে আটকে রাখে জনতা। পুলিশ গিয়ে তাকেও আটক করে। তবে কোথা থেকে চালের বস্তাগুলি তোলা হয়েছিল, এবং সেগুলি কোথায় যাচ্ছিল, তা জানাতে পারেনি খালাসি। ম্যাটাডোরের মালিককে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। খোঁজ চলছে চালকেরও।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডু। অরুণ সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বপনবাবু সাতটি রেশন দোকানে হানা দেন। ততক্ষণে খাদ্য দফতরের মহকুমা খাদ্য নিয়ামক এবং পরিদর্শকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মরণবাবুও।

রেশন ডিলাররা কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলেন, ‘‘গুরুতর অভিযোগ। আমরা রেশন সামগ্রী তোলা, বণ্টন এবং মজুতের হিসেব মিলিয়ে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পুলিশ রেশন সামগ্রী পাচারের জন্য ভ্যান চালক, ম্যটাডোরের খালাসি এবং আরও এক মজুতদারকে আটক করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পাঁচ রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে বেদিভবনের আরও দুই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে। স্বপনবাবু জানিয়েছেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রেশন ডিলারেরা রেশন সামগ্রী দীর্ঘ দিন ধরে কম দিচ্ছে। কখনও কখনও কোনও কিছুই দেওয়া হয় না। বলা হয়, ‘‘সরকার থেকে মাল আসেনি’’। রয়েছে প্রচুর ভুয়ো কার্ডও। এই সব রেশন সামগ্রী মজুতদারদের হাত ঘুরে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন।

জেলাতে অবশ্য এমন অভিযোগ নতুন নয়। মাসখানেকের মধ্যে শান্তিপুর এবং চাকদহেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। রেশন সামগ্রী না দেওয়ার অভিযোগে চাকদহে রেশন ডিলারকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন এলাকার বাসিন্দারা।

স্বপনবাবু বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। দোষী রেশন ডিলাররা যাতে কোনও ভাবে পার না পেয়ে যান, সে দিকে আমরা নজর রাখছি। আমি নিজে জেলা খাদ্য নিয়ামকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’ মরণবাবু বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকে খবর নিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী এ দিন মজুতদার-ডিলারদের হাতে নাতে ধরা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, বিষয়টি নিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিয়োগ জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Ration conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE