Advertisement
১৮ মে ২০২৪
ঝড়-বৃষ্টি যা-ই হোক, ক্লান্তি নেই ওঁর

ডাকাতের ভয়ে দৌড়ে বাড়ি ফেরেন স্বপন

সীমান্তের হোগলবেড়িয়ার গোপালনগর গ্রামের স্বপনকুমার নাথ এখন সত্তর বছরের প্রবীণ। তাতে তাঁর মনের জোরের দৌড় এতটুকু শ্লথ হয়ে পড়েনি। সাতচল্লিশ বছর আগে যে দৌড় শুরু করেছিলেন এক তরুণ, আজ এতদুলো বছর পরেও সেই ছুটে চলায় ছেদ পড়েনি।

বয়স তাঁকে হারাতে মানেনি। নিজস্ব চিত্র

বয়স তাঁকে হারাতে মানেনি। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৯
Share: Save:

এক বন্ধুর বিয়েতে বরযাত্রী গিয়েছিলেন। বিয়েবাড়ি থেকে বাড়ি ২৫ কিমি পথ। বাসের সমস্যা থাকায় উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশ পায়ে হাঁটা দিলেন। চোর-ডাকাতের ভয়ে প্রায় দৌড়ে ফিরেছিলেন। সেদিনই বুঝতে পেরেছিলেন, দৌড় তাঁর মজ্জায়।

সীমান্তের হোগলবেড়িয়ার গোপালনগর গ্রামের স্বপনকুমার নাথ এখন সত্তর বছরের প্রবীণ। তাতে তাঁর মনের জোরের দৌড় এতটুকু শ্লথ হয়ে পড়েনি। সাতচল্লিশ বছর আগে যে দৌড় শুরু করেছিলেন এক তরুণ, আজ এতদুলো বছর পরেও সেই ছুটে চলায় ছেদ পড়েনি। উপরন্তু, প্রতি এক বছর করে বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়িয়ে গিয়েছেন দৌড়ের পরিধি।

কলেজে ভর্তির সময় থেকে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে দৌড়াতে শুরু করেন স্বপনবাবু। তারপর আর থামেননি। সাতচল্লিশ বছর আগে শুরু করে আজ অবধি একইভাবে দৌড়ে চলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, প্রতিদিন সকালে না দৌড়ালে শরীর ম্যাজম্যাজ করে! তাই যতদিন পারব, দৌড়ে যাব।” শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা তাঁকে দেখা যায় স্থানীয় যমশেরপুর হাইস্কুলের মাঠে। সূর্য ওঠার আগে হাজির হয়ে যান সেখানে। স্কুলের মাঠটি এক পাক ঘুরলে হিসেব দাঁড়ায় চারশো মিটার। সেইমতো প্রতিদিন মাঠটিকে চল্লিশ বার প্রদক্ষিণ করেন স্বপনবাবু। রোজ ১৬ কিমি ছুটতে না পারলে সত্তরের বৃদ্ধের মন ভরে না। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার শংসাপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে দৌড় শুরু করি। সেই বছর ২৩ জানুয়ারি জিয়াগঞ্জে ১৬ কিমি দৌড় প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান পেয়েছিলাম।’’

শুধু নিজের বয়স বেড়ে যাওয়া নয়, স্বাধীনতার বয়স বাড়াও তাঁর কাছে এক অন্য ধরনের চ্যালেঞ্জ— ‘‘২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে দৌড়াই। গত বছর ৭১তম বর্ষপালনে ৪০০ মিটারের মাঠে ৭১ বার দৌড়েছি। এবার তা বেড়ে হবে ৭২ পাক।’’

তবে শুধু দৌড় নয়, শরীরচর্চা সহ নানা দুঃসাহসিক কাজে তিনি বরাবরের উৎসাহী। স্বপনবাবুর মুথে থেকই শোনা গেল, ১৯৭৫ সালে কলেজের প্রতিযোগিতায় জলঙ্গি নদীতে পরপর দু’বার সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা অবধি টানা বারো ঘণ্টা সাঁতার কেটে রেকর্ড গড়েছিলেন। ১৯৮২ সালে বন্ধু দিলীপ মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে করিমপুর থেকে দিঘা পর্যন্ত প্রায় চারশো কিমি পথ পাড়ি দিয়েছিলেন সাইকেলে চেপে। দু’দিনের যাত্রা শেষে দিঘা পৌঁছেছিলেন। যমশেরপুর ক্লাবের সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস ও তরুণসঙ্ঘ ব্যায়ামাগারের সম্পাদক দুর্গা সাহা জানান, খুব ছোটবেলা থেকে তাঁকে মাঠে দৌড়তে দেখছেন ওঁরা। ওঁকে দেখেই এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শরীরচর্চার মানসিকতা গড়ে তোলা উচিত।

স্বপনবাবু শুধু জানেন, বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তাকে থামাতে আরও কিছু পাক দৌড় বাড়ানো জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Healthy body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE