Advertisement
E-Paper

‘হোক পরিবর্তন’ স্লোগান রানাঘাটে

সকালে এসেই তাঁরা দেখেন যে তাঁবুটা উধাও। রাতারাতি কে বা কারা সেটা সরিয়ে দিয়েছে! কিন্তু এত সহজে যে তাঁদের দমিয়ে রাখা যাবে না তা তাঁরা প্রমাণ করে দিলেন। গিটার হাতে বসে পড়লেন রাস্তায়। গিটারের তালে তালে তাঁরা গাইতে শুরু করলেন ‘হোক পরিবর্তন’ কিংবা ‘আজ যারা ঘুমিয়ে আছো, তারা ওঠো জেগে।’ জনা কুড়ির ওই দলটির সঙ্গে গানের সুরে সুর মেলালেন পথ চলতি মানুষ, অভিভাবকেরাও। বুধবার সকাল থেকেই গানে-প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে উঠল রানাঘাটের ওই কনভেন্টের সামনের রাস্তা। তার মধ্যেই ওঁরা ফের মনে করিয়ে দিলেন, “নো পলিটিকস।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০১:০৩
স্কুলের সামনে রানাঘাট প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

স্কুলের সামনে রানাঘাট প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সকালে এসেই তাঁরা দেখেন যে তাঁবুটা উধাও। রাতারাতি কে বা কারা সেটা সরিয়ে দিয়েছে! কিন্তু এত সহজে যে তাঁদের দমিয়ে রাখা যাবে না তা তাঁরা প্রমাণ করে দিলেন। গিটার হাতে বসে পড়লেন রাস্তায়। গিটারের তালে তালে তাঁরা গাইতে শুরু করলেন ‘হোক পরিবর্তন’ কিংবা ‘আজ যারা ঘুমিয়ে আছো, তারা ওঠো জেগে।’ জনা কুড়ির ওই দলটির সঙ্গে গানের সুরে সুর মেলালেন পথ চলতি মানুষ, অভিভাবকেরাও। বুধবার সকাল থেকেই গানে-প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে উঠল রানাঘাটের ওই কনভেন্টের সামনের রাস্তা। তার মধ্যেই ওঁরা ফের মনে করিয়ে দিলেন, “নো পলিটিকস।”

গত শুক্রবার রাতে রানাঘাটের ওই কনভেন্টে ডাকাতির পাশাপাশি ধর্ষণ করা হয়েছিল এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে। প্রতিবাদে মুখর হয় গোটা দেশ। মোমবাতি মিছিল ও প্রতিবাদে সামিল হন ওই স্কুল-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরাও। ফেসবুকে ‘হোক পরিবর্তন’ বলে একটি পেজও তৈরি করা হয়। ইতিমধ্যে সেই ‘পেজ’কে ‘লাইক’ করে সদস্য সংখ্যা ৯০০ জনেরও বেশি। তারপর ফেসবুকেই ওই পড়ুয়ারা ও প্রাক্তনীরা জানিয়ে দেন যে, তাঁরা একটি প্রতিবাদ মঞ্চও তৈরি করতে চলেছেন। মঙ্গলবার যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কিছু পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা রানাঘাটে যান। স্কুল লাগোয়া চেতনার মাঠে তাঁদের সঙ্গে কথা হয় ওই পড়ুয়া ও প্রাক্তনীদের। তখনই মঞ্চ তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং নামও দেওয়া হয় রানাঘাট প্রতিবাদী মঞ্চ।

ওই মঞ্চের পক্ষে রানাঘাট কনভেন্টের প্রাক্তনী মোনালিসা সাহা, সোহম মুখোপাধ্যায়রা জানান, এটা একেবারেই অরাজনৈতিক মঞ্চ। সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কাউকেই এখানে নেওয়া হবে না। এ দিন সকালে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এক অভিভাবিকা ওই মঞ্চে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সবিনয়ে না বলে দেওয়া হয়েছে। সোহম বলেন, “এখনও পর্যন্ত মোট ৬০ থেকে ৭০ জন আমাদের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে রয়েছেন। আরও লোকজন যোগাযোগ করছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কমিটি তৈরি করা হয়নি।” আপাতত ঠিক করা হয়েছে রোজ সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা এ ভাবেই রাস্তার ধারে বসে গান গেয়ে প্রতিবাদ করবেন।

ওই মঞ্চের সদস্যরা জানান, যাদবপুর থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকজনই ছিলেন ‘হোক কলরব’ এর সদস্য। তাঁরাও কথা দিয়ে গিয়েছেন, যে এই মঞ্চ অরাজনৈতিক থাকলে ‘হোক কলরব’ এর সদস্যরাও বৃহত্তর আন্দোলনে এই মঞ্চের পাশে থাকবেন। সেখান থেকে প্রভাবিত হয়েই কি আপনাদেরও স্লোগান---‘হোক পরিবর্তন?’ নাকি বহু ব্যবহৃত ‘পরিবর্তন’ শব্দ দিয়ে অন্য কোনও বার্তা দিতে চাইছেন? মঞ্চের জনাকয়েক সদস্য সমস্বরে বলেন, “প্লিজ, এটার মধ্যে কোনও রাজনীতি খুঁজবেন না। আমরা বলছি মহিলাদের প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। রানাঘাটের পরে ফের একই ঘটনা ঘটল অগ্রদ্বীপে। শুনছি, সেখানেও এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। চারপাশে এ সব কী হচ্ছে বলুন তো? আমরা এ সবেরই পরিবর্তন চাইছি। সেই কারণেই এই আন্দোলন।” রানাঘাটের ওই ঘটনার যতদিন পর্যন্ত না কোনও কিনারা হচ্ছে ততদিন এই আন্দোলন চলবে বলেই ওই মঞ্চের দাবি।

এ দিনও সন্ধ্যায় ওই মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। প্রেসিডেন্সির অর্কপল দত্ত, যাদবপুরের অরিত্র মজুমদার বলেন, “এই আন্দোলনের কথা আগেই জানতে পেরেছিলাম। সেই মতো ওঁদের সঙ্গে গতকালও দেখা করে গিয়েছি। অরাজনৈতিক ভাবে ওঁদের এই আন্দোলন প্রশংসনীয়। আমরা ওঁদের সঙ্গে আছি।” এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী দে, কাকলি বিশ্বাসরা বলছেন, “আমরাও ওঁদের পাশে আছি। কারণ আমাদেরও দাবি একই।”

বুধবারেই রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে ওই মঞ্চের সদস্যদের বক্তব্য, “কারা তদন্ত করছে সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের দাবি, অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দেওয়া হোক।” এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, “পুলিশ ও সিআইডি তো গত পাঁচ দিনে কিছুই করতে পারল না। সিবিআই অনেক বড় সংস্থা। আশা করি, এ বার কিনারা হবে।”

রানাঘাট-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন নদিয়া ও পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদেও কোথাও পথ অবরোধ, কোথাও মৌনী মিছিল বের হয়েছে। রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে ডাকাতি ও বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে পথে নামল ডোমকলের একটি স্কুল। বুধবার দুপুরে গড়াইমারি জে কে বিদ্যানিকেতন থেকে প্রায় দু’হাজার পড়ুয়া মৌনী মিছিল বের করে। স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক নন্দলাল হালদার বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদ না জানানোটাও একটা অপরাধ। শিক্ষকদের সঙ্গে পড়ুয়ারাও স্বতস্ফূর্ত ভাবে মিছিলে যোগ দেয়।” এ দিকে, কৃষ্ণনগরে মানবধিকার সংগঠন এপিডিআর, একটি সামাজিক সংগঠন ‘পথ’, সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রান্তদর্শী:-র পক্ষ থেকে মোমবাতি মিছিল বের হয়। ওই মিছিল শহরের বেশ কিছু এলাকা পরিক্রমা করে। ওই একই ঘটনার প্রতিবাদে রানাঘাট-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিকেল পাঁচটা থেকে মিনিট পনেরো পথ অবরোধ করে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই।

nun rape ranaghat hok poribartan rape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy