বোনপোর বিয়ে বলে কি না কথা। যেমন তেমন কিছু দিয়ে দিলে হয়? কিন্তু হাতে টাকাই বা কই? যেটুকু রয়েছে, সেটাই বা উপহারের পিছনে খরচ করে দিলে চলে কী করে?
এমন হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে শুভ্রা চৌধুরীর মাথায়। বললেন, ‘‘ভাগ্যিস নিজের শাড়িটা আগেভাগে কিনে রেখেছিলাম। না হলে কী হতো? বোনপোর বিয়েতে একটুও সাজব না! সেটা হয়?’’ তাঁর আক্ষেপ, উপহারটাও যদি কিনে রাখতাম, তা হলে এ দুর্দশা হতো না। ইতিমধ্যেই পাশের বাড়িতেও নিমন্ত্রণ রয়েছে।
২১ নভেম্বর থেকেই বিয়ের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কার্ড হাতে এমন হাহুতাশ প্রায় ঘরে ঘরে। কারণ, ইচ্ছা ও ক্ষমতা দু’টোই থাকা সত্ত্বেও এটিএমে টাকা মিলছে না। ভরসা বলতে একমাত্র ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড।
বহরমপুরের আর এক বাসিন্দা তপন রায় বললেন, ‘‘গত সোমবার বিয়েবাড়ির নেমতন্ন ছিল। বুধবার আবার একটা বৌভাতের নিমন্ত্রণ ছিল। উপহার দিয়ে হাত একেবারে ফাঁকা। সামনেই আবার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে। কী যে করব, বুঝে পাচ্ছি না। খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’’
একই বক্তব্য বহরমপুর কলেজের শিক্ষক সমিত মণ্ডলের। বললেন, ‘‘ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মিলছে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। কাজকম্মে যাব, না রোজই লাইনে দাঁড়াব। ওই টাকায় চলে? তার মধ্যে আবার চারটে নিমন্ত্রণ। অ্যাকাউন্টে টাকা থেকেও তুলতে পারছি না। কী যে করি?’’
মাথায় হাত পড়েছে দোকানিদের। শাড়ি থেকে শো-পিজ, দোকানে ঢুকেই লোকজন বলে দিচ্ছেন, অল্পের মধ্যে কিছু দেখান। ফলে ব্যবসায়ীদের হাহুতাশ, ‘‘বিয়ের বাজারে যে দু’চারটে বিক্রিবাটা হয়, এ বার তা-ও নেই।’’
তাঁদের অবশ্য দাবি, ফুলের দোকানে কিছুটা হলেও চওড়া হচ্ছে হাসি। ব্যাপারটা যে কিছুটা হলেও সত্যি, মেনেও নিলেন ফুল বিক্রেতা উমপদ মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘নোটের চোটে যাঁরা দামি উপহার কিনতে পারছেন না, তাঁরা এ বার ঝুঁকেছেন ফুলের তোড়ায়। বিক্রি বলতে এই আর কী!’’