একটা কেঁচে যাওয়া গুটির খেসারত দিতে কি শেষ পর্যন্ত পাঁকা গুঁটিই কেঁচে যাবে?
কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী নিয়ে সিপিএম-কংগ্রেসের দড়ি টানাটানি সে আশহ্কাকেই সামনে এনে ফেলেছে। বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই নিচু তলার কর্মীরা মনে করছেন, কংগ্রেসের ক্রমান্বয়ে প্রার্তী বদল। তা নিয়ে পেকে ওঠা আকচাআকচি আর তারই মাঝে বামেদের প্রার্থী দিয়ে দেওয়া— সব মিলিয়ে কৃষ্ণগঞ্জের ভবিষ্যৎই হয়ে পডে়ছে অনিশ্চিত।
নদিয়ার এই প্রান্তিক আসনটি সেই অর্থে জোটের কাছে তেমন সম্ভাবনাময় ছিল না কোনওকালেই। বিশেষ করে, বছর খানেক আগে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে সিপিএম ও কংগ্রেস উভয়ই রীতিমত ধরাশায়ী হয়েছিল। প্রথম থেকেই কোন দলই এই কেন্দ্রটি নিতে চাইছিল না তাই। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস প্রার্থী দিতে রাজি হলেও লড়াইটা যে একেবারে হাড্ডাহাড্ডি হবে সে ভরসাও ছিল না। অথচ এমন একটি আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দুই জোট শরিকের এই দড়ি টানাটানির ফলে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে, তার প্রভাব পাশের কেন্দ্র গুলিতে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কংগ্রেসের অনেকেই।
এখন প্রশ্ন, কেন এমন হল? নদিয়ার বাকি ১৬টি আসনে যখন কংগ্রেস ও সিপিএম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে, তখন কেন কৃষ্ণগঞ্জে এই ব্যতিক্রমী অবস্থা কেন?
২২ মার্চ, এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। জেলা থেকে এক মাত্র তারই নাম পাঠানো হয়েছিল। সিপিএমও আপত্তি তোলেনি। প্রচারও শুরু হয়েছিল জোর কদমেই। সাত দিন ধরে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচার ও দেওয়াল লেখার পরে হঠাৎ করে প্রদেশ কংগ্রেস থেকে বিশ্বনাথবাবুর পরিবর্তে চাকদহের বাসিন্দা প্রতাপ রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। যা শুনে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও, পরের দিন থেকেই তুলেছিলেন আপত্তি।তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, প্রতাপবাবুর হয়ে প্রতারে বের হওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে প্রতাপবাবু নিজেকে সরিয়ে নেন। স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা ফের বিশ্বনাথবাবুর জন্যই জিগির তোলেন। জোট সঙ্গী সিপিএম-ও বিশ্বনাথের দিকেই তাদের ভোট দেয়। প্রদেশ নেতৃত্ব অবশ্য সে কথায় তেমন গুরুত্ব না দিয়ে এ বার কৃষ্ণগঞ্জের জন্য বেছে নেন নিত্যগোপাল মন্ডলকে।
তাতে অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়নি। বরং কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ বিবাদ আরও সামনে এসে পড়ে। কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে কংগ্রেসের একটা বড় অংশ জানিয়ে দেয়— নিত্যগোপালের সঙ্গে তাঁরা নেই।
এই পরিস্থিতে দিন কয়েক আগে দুই দলের নেতৃত্ব এক জায়গায় বসে ঠিক করেন, জটিলতা কাটানোর জন্য সিপিএমই প্রার্থী দিক। আর দেরি না করে সিপিএম বগুলা লোকাল কমিটির সম্পাদক মৃণাল বিশ্বাসকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেই অবশ্য সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব এই বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে নেয়। তবে, এরই মধ্যে কংগ্রেসের কৃষ্ণগঞ্জের ব্লক নেতৃত্ব আবার নিত্যগোপালবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়া পরিস্থিতি আরও গোরাল হয়ে উঠে। এই মুহূর্তে কোন পক্ষই পিছু হটতে রাজি নয়।
শনিবার রাতেই প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী নদিয়া জেলা সভাপতি অসীম সাহাকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মত রবিবার কৃষ্ণনগরে দলীয় কার্যালয়ে দুই ব্লকের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক ডেকে ছিলেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অসীম সাহা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না হাঁসখালি ব্লক সভাপতি দিনেশ চক্রবর্তী সহ সিংহভাগ নেতৃত্ব।
তবে বৈঠকে উপস্থিত হয়ে প্রথম ঘোষিত প্রার্থী বিশ্বনাথ বিশ্বাস জানিয়ে দেন, দলের কর্মীরা নিত্যগোপাল মন্ডলকে মেনে নিতে রাজি নয়। আর তিনি কর্মীদের মনোভাবের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করতে পারবেন না। তবে দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করবেন বলে জানিয়ে দেন কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক নেতৃত্ব। অসীমবাবু বলেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী আমি সকলকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি দলের সিদ্ধান্তের বিরেধীতা করা যাবে না। সেটা করতে হলে দল ছাড়তে হবে।’’
তহলে কি, এই জট মেটার নয়? এই কেন্দ্র কি পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধীতা করেবে জোট সঙ্গীরা? তা ছাড়া, দলীয় নেতাদের অনেকেরই আশঙ্কা, এই নিত্য প্রার্থী বদলের ছোঁয়াচ অন্যত্র না পড়ে। কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্র লাগোয়া রানাঘাট(উত্তর-পশ্চিম) কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী, জেলার প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলছেন, ‘‘প্রদেশ নেতৃত্বের উচিত এখনই বর্তমান ঘোষিত প্রার্থীকে তুলে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা। তার পরিবর্তে প্রথম ঘোষিত প্রার্থী বিশ্বনাথ বিশ্বাসকে প্রার্থী করা উচিত। কারণ তিনি দুই দলের কর্মীদের কাছে সমান ভাবে গ্রহণযোগ্য।’’ তবে, প্রার্থী বাছাই নিয়ে এই জটিলতা তাঁর কেন্দ্রে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন না তিনি। শঙ্কর বলেন, ‘‘তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে এটা কাম্য ছিল না।’’
নেতারা যাই ভাবুক, কৃষ্ণগঞ্জের ছোঁয়াচ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে দলের কর্মীদের মধ্যেই। নদিয়া জেলার এক তাবড় নেতার কথায়, ‘‘এর প্রভাব সংক্রামিত না হলেই ভাল। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দেড়দিন আগে এ ছাড়া আর কী-ই বা আশা করতে পারি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy