Advertisement
E-Paper

ঝুলন ঘিরে নবদ্বীপে ব্যবসার নতুন মরসুম

হাত দিয়া দিয়া, মুখানি মোছাঞা, দীপ নিয়া নিয়া চায়। কতেক যতনে, পাইয়া রতনে, থুইতে ঠাঞি না পায়। বড় আদরে রাধারানির যত্ন করে যদুনন্দন। রাধারানি যে মস্ত একটি সম্পদ। কী ভাবে তাকে রক্ষা করবে, তাই ভেবে ভেবে সারা ব্রজরাখাল। মলিন বাস, গরিব ঘর। কোথায় রাখবে সে এই সাত রাজার ধন এক মানিক?

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৪
মায়াপুরে ইস্কনের মন্দিরে ঝুলন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

মায়াপুরে ইস্কনের মন্দিরে ঝুলন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

হাত দিয়া দিয়া, মুখানি মোছাঞা, দীপ নিয়া নিয়া চায়। কতেক যতনে, পাইয়া রতনে, থুইতে ঠাঞি না পায়।

বড় আদরে রাধারানির যত্ন করে যদুনন্দন। রাধারানি যে মস্ত একটি সম্পদ। কী ভাবে তাকে রক্ষা করবে, তাই ভেবে ভেবে সারা ব্রজরাখাল। মলিন বাস, গরিব ঘর। কোথায় রাখবে সে এই সাত রাজার ধন এক মানিক?

তাই কার সুখে কাঁদবেন, তা ভেবে পান না মেদিনীপুরের যশোদাসুন্দরী থেকে বর্ধমানের রেবতী। এই বর্ষায় পথ ঘাট ঠেঙিয়ে এসেছেন নবদ্বীপে। এসে দেখেন সে এক যজ্ঞবাড়ি যেন। বন্যার ভয় কাটেনি। তবু ঝুলনে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। ভাল থাকার জায়গার অকুলান। কোনও মতে ঢুকে পড়েছিলেন একটি মন্দিরে মধ্যে। তখনই শুনলেন সন্ধ্যার মুখে ওই মহাজনী পদ। জুঁইফুলে সাজানো হয়েছে বিগ্রহ। অগুরু, চন্দের গন্ধ। ভোগের সুবাস। রাধা-মাধব যেন হাত বাড়িয়ে ডেকে নিলেন তাঁদের। নবদ্বীপ এমনই ইন্দ্রজাল জানে।

বড় একটি মন্দিরের পাশেই দোকান সত্যেন কুণ্ডুর। কথাটা ফেলতেই লুফে নিলেন। বললেন, ‘‘নানা জায়গায় জল দাঁড়িয়েছে। লোকের ঘরবাড়ি ভেসেছে। এ বার তাই তেমন ভিড় হবে না ভেবেছিলাম। কিন্তু ঝুলনের টানে মানুষ এসেছেন। দোকান খুলছি সকাল সকাল। বন্ধ করতে রাত হচ্ছে।’’ নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বললেন, ‘‘ঝুলন উৎসব নবদ্বীপের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি নতুন মরসুমের সূচনা ঘটিয়ছে।’’ বহু মানুষ এই সময়ে নানা জায়গা থেকে আসেন। ফলে সব রকমের ব্যবসায়ীদেরই এই সময়ে কেনাবেচা হয়। প্রাক শারদীয়া বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছে ঝুলনের এই সময়টি। তার একটি বড় কারণ, পাঁচ দিন টানা চলে এই উৎসব। তারপরে আবার রয়েছে জন্মাষ্টমী। তাই ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকছে। তাতে চাঙ্গা হচ্ছে নবদ্বীপের অর্থনীতির।

নবদ্বীপের ব্যবসায়ী আনন্দ ঘোষ বলেন, ‘‘বর্ষাকালে পর্যটকই বলুন বা তীর্থযাত্রী, সবাই কমই আসত। জন্মাষ্টমীর সময়টুকু যা ভিড় হত। তাই বাজার কিছুটা ঝিমিয়েই পড়ত। এখন ঝুলন উৎসবের চেহারা নেওয়ায় সময় পাল্টেছে।’’ অনেকেই খোঁজ করছেন নবদ্বীপের কাঁসা পিতলের বাসনেরও। ব্যবসায়ী রতন কুণ্ডুর কথায়, ‘‘বিক্রি ভালই হচ্ছে। শুধু এখন দরকার, এই উৎসবকে আরও বড় করে প্রচার করার।’’

খুশি শহরের বিদ্বজ্জনেরাও। তাঁদের মতে, ঝুলনে বৈষ্ণবদের নানা সম্প্রদায়ের মিলন ঘটে। সেই সব সম্প্রদায়ের কীর্তন শোনা যায় মন্দিরে মন্দিরে। তাতে মধ্যযুগের পদচর্চা হয়। এ ভাবে ওই পদগুলির সংরক্ষণও হয়ে যায়।

নবদ্বীপে প্রচলিত প্রথা মেনে উৎসব শুরু হয়ে যায় শ্রাবণের শুক্লা প্রতিপদ থেকেই। ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরের ঝুলনের উৎসব চলে পক্ষকাল জুড়ে। চৈতন্যদেব জীবিতকালেই বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী তাঁর মূর্তি গড়িয়ে সেবাপুজো শুরু করে ছিলেন। এই মন্দিরে মহাপ্রভুর সেই প্রাচীনতম বিগ্রহের ঝুলনের শেষ পাঁচ দিন পাঁচটি ভিন্ন বেশে তাঁকে সাজানো হয়। মন্দিরের আর এক সেবাইত প্রদীপ কুমার গোস্বামী জানান, “ একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচদিনে পাঁচটি বেশে সাজানো হয় মহাপ্রভুকে। একাদশীতে নটবর বেশ, দ্বাদশীর দিন রাজনটবর, ত্রয়োদশীর দিন রাখাল, চতুর্দশীতে নাগরী বেশ এবং পূর্ণিমাতে রাজবেশ।” রাজবেশে মহাপ্রভুকে সাজানো হয় প্রচুর সোনার অলঙ্কার দিয়ে।

তবে বন্যার জন্য এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। মহাপ্রভু মন্দিরের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেন যে বিষ্ণুপ্রিয়া সমিতি তার সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “ঝুলনের রাজবেশে মহাপ্রভুকে যত গয়না পরানো হয়, সব মিলিয়ে তার পরিমাণ তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি হবে। তবে এবছর, রাজবেশে মহাপ্রভুকে সোনার নয়, ফুল এবং রুপোর গয়নায় সাজানো হবে।” এই ঘটনা মন্দিরের ইতিহাসে প্রথম ঘটল বলে জানাচ্ছেন সেবাইতেরা।

Nabadwip Jhulan ratan kundu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy