ভ্রমণ সংস্থার দফতরে একের পর এক বাতিল হচ্ছে কাশ্মীর যাত্রা। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের ভূগোল বইয়ে ডাল লেকের ছবি দেখে মুগ্ঘ হয়ে গিয়েছিল সৌমী। সদ্য মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছে। বাবার কাছে আমতা আমতা করে আবদার করেছিল, ‘‘গেলে হয় না বাবা!’’ মেয়ে অন্তঃপ্রাণ বাবা দেবদুলাল হালদার মেয়ের আবদার ঠেলতে পারেননি। তিনজনের কাশ্মীর উড়ে যাওয়ার যাবতীয় ব্যূবস্থা সেরে মেয়েকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘৩০ মার্চ আমরা ডাল লেকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলব!’’
পুলওয়ামার দুপুর সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে আমূল। বুকিং বাতিল করে এখন তাঁরা আন্দামানের হোটেল খুঁজছেন। দেবদুলাল বলছেন, ‘‘পুলওয়ামার ঘটনার পর সেখানে স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। তাই কাশ্মীর ট্যুর বাতিল।’’
মাধ্যমিকের পরে ভূস্বর্গ ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে।— বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের প্রদীপকুমার বন্দোপাধ্যায়ের কাছে ছেলে সৌম্যদীপ আবদার করে। তা মেটাতে ৩০ মার্চ কাশ্মীর যাওয়ার জন্য বহরমপুরের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে বুকিং করেছিলেন। কাশ্মীরে অশান্ত পরিস্থিতির জেরে বৃহস্পতিবার বুকিং বাতিল করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পরে পরিবার নিয়ে সেখানে যেতে মন চাইছে না। ভয়ই লাগছে বলতে পারেন। তাই বুকিং বাতিল করেছি।’’
দেবদুলাল বা প্রদীপদের বেড়ানো বাতিল কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। মুর্শিদাবাদের অনেকেই ভূস্বর্গ ভ্রমণ বাতিল করে অন্যত্র হোটেল খুঁজছেন এখন। অশান্তির জেরে গত কয়েক বছর ধরেই কাশ্মীরে পর্যটক কমেছে। তাতে দেশলাই ফেলেছে পুলওয়ামা। একাধিক ট্রাভেল এজেন্সির দরজায় পা রেখেই বোঝা গিয়েছে বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়েছে। ট্রাভেল এজেন্সির কর্তাদের দাবি, বুকিং বাতিল মানে শুধু যে হোটেল বাতিল তা তো নয়, ট্রেন-বিমানের টিকিট থেকে গাড়ির বুকিংও বাতিল করতে হচ্ছে। ফলে মোটা টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
গির্জা মোড়ের ট্রাভেল এজেন্সির কর্তা গোপীনাথ দাস বলেন, ‘‘মার্চ মাসে তিনটি গ্রুপে ৯০ জন কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য সংস্থায় বুকিং করেছিলেন। কিন্তু সেখানে জঙ্গিহানার পর পর্যটকরা এসে সেই বুকিং বাতিল করেছেন।’’ বহরমপুরের অন্য পর এক ট্রাভেল এজেন্ট শিবজ্যোতি ভৌমিক বলেন, ‘‘মার্চ মাসে আমাদের প্রায় ৩০ জনের বুকিং ছিল। বাতিল হয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy