Advertisement
২১ মে ২০২৪
অভিযুক্ত আমানতকারী

টাকা না পেয়ে এজেন্টের জমি দখল ডোমকলে

হাতে ছিল ফসল বিক্রির চোদ্দো হাজার টাকা। ডোমকলের কামড়দেয়ারের প্রৌঢ় জেকের মণ্ডলের কাছে টাকার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। বছর আটেক আগে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ভেবেছিলেন, টাকাটা ব্যাঙ্ক কিংবা ডাকঘরেই রাখবেন। কিন্তু বাধ সেধেছিলেন গ্রামেরই যুবক সমজেদ শেখ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:১১
Share: Save:

হাতে ছিল ফসল বিক্রির চোদ্দো হাজার টাকা। ডোমকলের কামড়দেয়ারের প্রৌঢ় জেকের মণ্ডলের কাছে টাকার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। বছর আটেক আগে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ভেবেছিলেন, টাকাটা ব্যাঙ্ক কিংবা ডাকঘরেই রাখবেন। কিন্তু বাধ সেধেছিলেন গ্রামেরই যুবক সমজেদ শেখ।

ডোমকলে তখন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা অর্থলগ্নি সংস্থা। কেউ ছ’বছরে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তো কেউ পাঁচ বছরে। সেই সময়ে কথাটা পেড়েছিলেন এক অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট সমজেদ। জেকেরকে বুঝিয়েছিলেন, ‘‘চাচা, আমাদের সংস্থায় টাকা রাখ, ছ’বছরে দ্বিগুণ!’’

প্রৌঢ় জেকের প্রথমে কিন্তু কিন্তু করছিলেন, ‘‘তা বাবা, কোম্পানি আবার উঠে যাবে না তো?’’ বুক ঠুকে সমজেদ বলেছিলেন, ‘‘কোম্পানি উঠবে কেন? আর কোম্পানি উঠে গেলেও আমি তো আছি। আমি তো আর উঠে যাব না।’’

গাঁয়ের ছেলের কথায় ভরসা করে নিজের কাছে পাঁচশো টাকা রেখে এককালীন সাড়ে তোরো হাজার টাকাই ওই সংস্থায় রেখেছিলেন জেকের। এ দিকে বছর দু’য়েক আগে সেই ‘স্কিমের’ মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ওই সংস্থার শাখা অফিসও পাততাড়ি গুটিয়েছে ডোমকল থেকে। অভিযোগ, সেই টাকা তো জেকের পাননি, উল্টে সমজেদেরও আর নাগাল পাচ্ছিলেন না।

শেষতক সমজেদের ১৪ শতক চাষের জমিরই দখল নেন জেকের। সে কথা কবুল করে জেকের বলছেন, ‘‘সমজেদ তখন অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার নাম নেই। আবার ওরও দেখা পাচ্ছিলাম না। কিন্তু জমি তো আর পালাতে পারে না। সেটারই দখল নিয়েছি। টাকা ফেরত দিলে জমিও দিয়ে দেব।’’

এ দিকে ওই এজেন্ট সমজেদের দাবি, ‘‘টাকা নয়ছয় করেছে কোম্পানি। আমরা সামান্য কমিশন পেতাম মাত্র। আমরা কোথা থেকে টাকা ফেরত দেব।’’ তাঁর দাবি, গায়ের জোরে জমির দখল নিয়েছেন জেকের। সমজেদ মঙ্গলবার বিষয়টি ডোমকল থানাতে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছএ পুলিশ।

সমজেদের দাবি, ‘‘মেয়াদ ফুরোনোর অনেক আগেই জমির দখল নিয়েছে জেকের। এমনকী আমি আসল টাকাটা দিতে চেয়েছিলাম। তাতেও রাজি হয়নি।’’ জেকেরের সেই এক গোঁ, ‘‘এত কথার কী আছে বাপু। রক্ত জল করা টাকা দিয়েছিলাম। সুদ-সহ ফেরত দিলেই জমি দিয়ে দেব।’’

জেকের একা নন, ওই সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন ডোমকল এলাকার অনেকেই। তাঁরাও কেউ টাকা ফেরত পাননি। সংস্থা পাততাড়ি গোটাতেই প্রথমে হইচইও হয়েছিল। কিন্তু পরে তা থিতিয়ে যায়। কিন্তু জেকেরের মতো এমন কাণ্ড আর কেউ করেছেন বলে মনে করতে পারছেন না জেলা পুলিশের কর্তারা।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সেই সময় অনেকেই ওই সংস্থার নানা প্রলোভনে পা দিয়ে সব খুইয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা অনেক। বেশিরভাগ লোকেই টাকা ফেরত পায়নি। তা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়। তবে জেকের যা করেছেন সেটাকেও বেআইনি বলে ওই পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘জেকের টাকা না পেয়ে এলাকার ওই এজেন্টের জমি দখল করেছেন। এমনটা চলতে থাকলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। ফলে সেটাকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Land Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE