Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জগন্নাথ নাকি পর্দার পিছনে মুকুলের হাত?

যত নেতা, তত মুখ। যত গোষ্ঠী, তত সম্ভাবনা। রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী বাছাই করতে তাই কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। 

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

  সুস্মিত হালদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৭
Share: Save:

যত নেতা, তত মুখ। যত গোষ্ঠী, তত সম্ভাবনা। রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী বাছাই করতে তাই কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে।

বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, প্রার্থী ঘোষণা এখন সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু কে এখানে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। রাষ্ট্রী স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের তরফে স্থানীয় তিন জনের নাম সুপারিশ করা হলেও এই কেন্দ্র নিয়ে তারা বিশেষ নাক গলাতে চাইছে না। বরং বিজেপি নেতাদের উপরেই তা অনেকটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে যেহেতু সঙ্ঘের সুপারিশ, ওই তিন জন কিছুটা হলেও লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন বিজেপি কর্মীরা। সেই তালিকায় অন্যতম নাম দলের দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার। শুধু সঙ্ঘ নয়, জেলা নেতাদের একটা বড় অংশও প্রবল ভাবে তাঁকে চাইছে বলে খবর। দলের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গেও তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন। যদিও কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে‌র ঘটনায় সিআইডি তাঁকে জেরা করায় এবং সেই সত্যরই স্ত্রী রূপালী বিশ্বাসকে তৃণমূল এই কেন্দ্রে প্রার্থী করায় হিসেব গোলমাল হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সঙ্ঘের তালিকায় আছেন প্রাক্তন রেলকর্মী, আড়ংঘাটার শ্রীনিবাস সরকারও। তিনি দলের তফসিলি জাতি ও জনজাতি মোর্চার নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি এবং সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ ছাড়াও আছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানবেন্দ্র ঘোষ, যিনি কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে সত্যজিৎ বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। দলের রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন বলে একটি সূত্রের দাবি।

সক্রিয় রয়েছেন দলের জগন্নাথ- বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনও। দলেরই একটি সূত্রের দাবি, তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গত বারের প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাসের ছেলে, গ্রামীণ চিকিৎসক সুজিত বিশ্বাসকে প্রার্থী করতে। তাঁরা আবার যোগাযোগ রাখছেন রাহুল সিংহের সঙ্গে। দলের ভিতরে মতুয়া নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশও তাঁকে চাইছেন। ঠাকুরবাড়ির ঘনিষ্ঠ এই নেতার পাশাপাশি উঠে আসছে আরও দু’জনের নাম—বিভা মজুমদার ও মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতা অরবিন্দ বিশ্বাস। দু’জনেই বনগাঁর বাসিন্দা এবং ঠাকুরবাড়ির ঘনিষ্ঠ। শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে দলের একটি সূত্রের দাবি।

রানাঘাট কেন্দ্রে ও পার বাংলা থেকে আসা হিন্দু ভোটারের সংখ্যা বিপুল। এত দিন তৃণমূলের পকেটে থাকা তাঁদের ভোটই ছিনিয়ে নিতে চাইছে বিজেপি। সত্যজিৎ বিশ্বাসের অনুপস্থিতিতে মতুয়াদের উপরে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণও আগের তুলনায় আলগা হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি নেতাদের কারও-কারও দাবি। কিন্তু জেলার ভিতর থেকে সুজিত বিশ্বাস ছাড়া তেমন কোনও মুখ উঠে আসছে না। আবার বহিরাগত প্রার্থী দিয়ে এই কেন্দ্রে বিশেষ লাভ হবে না বলেও মনে করছেন দলের অনেকে।

দলের ভিতরে মতুয়া নেতা বলে পরিচিত, দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি এবং জগন্নাথ-বিরোধী বলে পরিচিতি দিব্যেন্দু ভৌমিক মতুয়া প্রার্থী দাঁড় করানোর জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাতে বিশেষ কাজ হবে বলে মনে করছেন না তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, “শুধু মতুয়া বললেই তো হবে না। তেমন মুখ কই যে মতুয়া ভোটকে গুছিয়ে ঘরে তুলতে পারবে? তার চেয়ে মতুয়া নন, কিন্তু সাংগঠনিক ক্ষমতার জেরে তৃণমূল বিরোধী ভোট গুছিয়ে ঘরে তুলতে পারবেন, এমন লোককেই দাঁড় করানো উচিত।”

তবে পর্দার পিছন থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে এক মহিলার নামও। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, অর্চনা মজুমদার নামে কলকাতার এক মহিলাকে প্রার্থী করার জন্য রাজ্যস্তর থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা নেতাদের একটি অংশের দাবি, মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ অর্চনা তাঁকে ধরেই রানাঘাটে টিকিট পাওয়ার চেষ্টায় আছেন। জেলার কোনও গোষ্ঠীই তাঁকে চাইছে না। তবু মুকুলের প্রসঙ্গ যখন হাওয়ায় ভাসছে, অর্চনার নাম কেউই একেবার উড়িয়ে দিতে পারছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE