প্রতীকী ছবি।
এক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস নেতাদের বলতেন ‘তরমুজ’ — বাইরে সবুজ ভিতরে লাল। এখন উপমাটা কিঞ্চিৎ পাল্টে গিয়েছে। বাম এখন নখদন্তবিহীন। এখন আবার কিছু রাজনৈতিক কর্মী থেকে সাধারণ গেরস্থ মানুষের কথাবার্তায় আঁচ মিলছে, যাঁরা ‘বাইরে সবুজ ভিতরে গেরুয়া’। আর তাতেই অনেকটা আশার আলো দেখছে বিজেপি শিবির।
তৃণমূল পরপর দু’দফায় জয় পেয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এরই মধ্যে শাসক দলের নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মানুষের। জোরালো হয়েছে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া’। কিন্তু ভয়ে-ভক্তিতে তার বহিঃপ্রকাশ ততটা ঘটছে না। কিন্তু নির্বাচন যদি ঠিক ভাবে হয়, তবে ইভিএমে তার প্রতিফলন ঘটতেই পারে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার প্রচুর ব্লকে ভোট হয়নি। বেশির ভাগ এলাকায় মনোনয়ন জমা থেকে শুরু করে ভোট গণনা পর্যন্ত সর্বস্তরে শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পরেও বেশ কিছু জায়গায় বিজেপি ভাল ফল করে। তেহট্ট ও করিমপুরে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে উল্লেখযোগ্য আসন পেয়েছিল বিজেপি। বিধানসভা ভোটে ওই সব এলাকায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। হরিণঘাটা ব্লকে বেশির ভাগ আসনেই ভোট হয়নি। সেখানে এমনকি জেলা পরিষদ আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ।
বিজেপির দাবি, অবাধে ভোট হলে হার নিশ্চিত বুঝেই তা হতে দেওয়া হয়নি। রানাঘাট উত্তর-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি নেতা অটল ঘোষের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস সত্ত্বেও ১১টি পঞ্চায়েতে ভাল আসন পেয়েছি আমরা। দত্তফুলিয়া, যুগলকিশোর, বহিরগাছি পঞ্চায়েতে বেশ কয়েকটি করে আসন পেয়েছি।’’ ওই সব এলাকার তৃণমূল নেতারাই বলছেন, বিজেপির মিছিলে তখনও তেমন লোক হত না, এখনও হয় না। কিন্তু ভোট গিয়েছে বিজেপির বাক্সে। তাঁদের মতে, এ সবই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ফল।
বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার স্বাস্থ্য সেলের আহ্বায়ক কৃষ্ণ মাহাতো অবশ্য পাল্টা দাবি করছেন, ‘‘আমার ধর্মের নামে রাজনীতি করি না। তৃণমূলই সংখ্যালঘু তোষণ করে ধর্মের রাজনীতি করছে। ফলে মানুষ বিরক্ত হয়ে আমাদের দিকে ঝুঁকছেন।’’
এক সময়ের বাম নেতা অটলের মতে, রানাঘাট লোকসভায় এ বার বিজেপি ভাল ফল করতে বাধ্য। এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট মেরেকেটে ১৫ শতাংশ। অটলের দাবি, ‘‘তৃণমূল হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কথা বলছে বটে। কিন্তু আসলে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ এককাট্টা হচ্ছে। হিন্দুরা তো বটেই, এমনকি সংখ্যালঘুরাও অনেকে আমাদের ভোট দেবেন।’’
আগের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে নাকাশিপাড়া ব্লকে খুবই খারাপ ফল করেছিল বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটেও নাকাশিপাড়া কেন্দ্রে তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেসের জোট সেয়ানে-সেয়ানে টেক্কা দিয়েছিল। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোটে ব্লকের বর্ধিষ্ণু এলাকা বেথুয়াডহরি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে বিজেপি। আগের পঞ্চায়েত ভোটে ওই পঞ্চায়েতে বিজেপি কোনও আসন না পেলেও গত বার বিজেপি আসন পেয়েছে ২৪টির মধ্যে ১৭টি। ওই পঞ্চায়েত এখন তাদেরই দখলে। একই ভাবে, ১৭টির মধ্যে ১৩টি আসন জিতে নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপির। বেথুয়াডহরি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতও তাদের দখলে। ওই বিধানসভা এলাকায় জেলা পরিষদের একটি আসনও তারা জিতেছে।
বেথুয়াডহরি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান মনোরঞ্জন মালাকারের দাবি, ‘‘প্রচুর কাজ হলেও বহু মানুষ আমাদের ভোট দেননি। তাঁরা ধর্মের নামে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন।’’ কল্যাণী ব্লকের এক তৃণমূল নেতার মতেও, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি হিন্দু ভোট ভাঙিয়েই জয় পেয়েছে। সেই চোরাবালিতে আমাদের প্রার্থীরা তলিয়ে গিয়েছেন। গোটা জেলায় ভোট হলে চোরাবালির গভীরতাটা ভাল বোঝা যেত।’’ এই সব তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা, বাইরে তৃণমূলের সঙ্গে থেকেও বা মিটিং-মিছিলে গিয়েও বেশ কিছু কর্মী, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ তলায়-তলায় গেরুয়া জামা চড়িয়ে বসে থাকতে পারেন। তাঁরা ইভিএমে ভরাডুবি ঘটাতে পারেন। কিন্তু বহু জায়গায় পঞ্চায়েত ভোট না হওয়ায় তার ব্যাপ্তিটা মাপা যাচ্ছে না।
নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘এ সব কষ্টকল্পনা। পঞ্চায়েত ভোটে যে সব এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করেছে, সেখানে সিপিএম-কংগ্রেসের ভোট ওদের দিকে গিয়েছে। আমাদের কেউ বিজেপির দিকে ঝোঁকেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy