উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া সাত তাড়াতাড়ি ‘কোর ব্যাঙ্কিং সলিউশন’ বা ‘সিবিএস’ চালু করার ফলে নবদ্বীপে মুখ থুবড়ে পড়েছে ডাক পরিষেবা। সম্পূর্ণ ভাবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবস্থা শুরু থেকে হোঁচট খেতে খেতে চলেছে। না আছে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ কর্মী, না আছে এই পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত অত্যাধুনিক কম্পিউটার এবং অনান্য যন্ত্রপাতি। যার ফলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ পেনশনপ্রাপক বা সাধারণ গ্রাহকদের। টাকা তোলা, জমা এমনকী পাশবই আপডেট করার জন্যও লম্বা লাইন পড়ছে। একই কাজের জন্য একাধিক দিন ঘুরতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
তবে এই ডামাডোলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডাকঘরের স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্প। নানা অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন আমানতকারি থেকে এজেন্ট সকলেই। আমানতকারিরা দিনের পর দিন মোটা টাকা নিয়ে জমা দিতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ডাকঘরের বিভিন্ন স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে যে এজেন্টরা কাজ করেন তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে আমানতকারিদের কাছে। অনেকেই মনে করেন, এজেন্টদের অক্ষমতার জন্য তাঁদের টাকা ঠিক সময়ে জমা পড়ছে না। তাঁরা এজেন্টদের উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। ফলে নবদ্বীপসহ সংলগ্ন এলাকায় ডজনখানেক ডাকঘরের উপর নির্ভরশীল অসংখ্য এজেন্টের রুটিরুজি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নবদ্বীপের মুখ্য ডাকঘরে চালু হয়েছিল সিবিএস ব্যবস্থা। তারপরে গত এক বছরের মধ্যে নবদ্বীপ মুখ্য ডাকঘরের অধীন এগারোটি সাব পোস্টঅফিসের বেশির ভাগেই সিবিএস ব্যবস্থা চালু হয়েছে গিয়েছে। এখন হাতে গোনা দু’তিনটি সাব অফিস সিবিএস-এর আওতার বাইরে আছে। ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যে সবগুলিতেই সিবিএস চালু হয়ে যাবে।
কিন্তু অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি আসার ফলে ডাকঘরের পরিষেবা নবদ্বীপে ভাল হওয়ার বদলে কার্যত ভেঙে পড়েছে।
নবদ্বীপ মুখ্য ডাকঘর থেকে গোটা নবদ্বীপ শহর এবং সংলগ্ন বিরাট এলাকা নিয়ন্ত্রিত হয়, ফলে যাবতীয় চাপ গিয়ে পড়ছে সেখানে। অথচ সেখানে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ কর্মী। মান্ধাতার আমলের কম্পিটার এবং একটি মাত্র প্রিন্টার সম্বল করে কার্যত হাবডুবু খাচ্ছেন কর্মীরা। দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন যেখানে হয়, সেখানে একটি টাকা গোনার ভাল মেশিন পর্যন্ত নেই। দিনের দিনের দিন ভিড়ের চাপে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। বৃদ্ধ পেনশনপ্রাপকদের পাসবই প্রতিমাসে আপডেট করার জন্য একাধিক দিন ডাকঘর ছুটতে হয়। আর এ জন্য সকলেই উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া এই ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্তকে দুষছেন।
ডাকঘর স্বল্পসঞ্চয় এজেন্টদের সংগঠনের নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক শশাঙ্ককুমার দাস জানান, কেবল মাত্র নবদ্বীপ মুখ্য ডাকঘরেই বছর খানেক আগে দৈনিক গড়ে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা জমা পড়ত। তার সঙ্গে অনান্য সাব অফিস মিলিয়ে প্রায় সম পরিমাণ টাকা জমা পড়ত। কিন্তু সিবিএস চালু হওয়ার পর থেকেই সব কিছু বদলে গিয়েছে। ইন্টারনেট নির্ভর এই ব্যবস্থা ‘লিঙ্কের’ অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে থাকছে।
এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি নবদ্বীপ মুখ্য ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নিরঞ্জন দাস। ডাকঘরের নদিয়ার (উত্তর) সুপারিন্টেডেণ্ট পুলক দাস জানান, “যা আছে তা দিয়েই পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। কোথাও কিছু অসুবিধা হলে, আমরা তা দ্রুত সমাধান করে ফেলতে পারছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy