Advertisement
২২ মে ২০২৪

দায়িত্ব নিয়ে টালবাহানায় বেহাল শতাধিক সড়ক

রাস্তার তৈরির পর এক দশকও পেরোয়নি। এরই মধ্যে বেহাল মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অধীনে তৈরি হওয়া শতাধিক রাস্তার। রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে একাধিকবার গ্রামবাসীরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। এ দিকে, রাস্তা মেরামতির জন্য পর্যাপ্ত অর্থও জেলা পরিষদের হাতে নেই বলে জানা গিয়েছে।

রঘুনাথগঞ্জ থেকে রাজানগর যাওয়ার বেহাল রাস্তা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

রঘুনাথগঞ্জ থেকে রাজানগর যাওয়ার বেহাল রাস্তা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

রাস্তার তৈরির পর এক দশকও পেরোয়নি। এরই মধ্যে বেহাল মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অধীনে তৈরি হওয়া শতাধিক রাস্তার। রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে একাধিকবার গ্রামবাসীরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

এ দিকে, রাস্তা মেরামতির জন্য পর্যাপ্ত অর্থও জেলা পরিষদের হাতে নেই বলে জানা গিয়েছে। রাস্তা সারাইয়ের সম্ভাব্য খরচ হিসেব করে রাজ্য সরকারের কাছে টাকা চেয়ে চিঠি লিখে আবেদন করা হলেও টাকা বা চিঠির উত্তর, কোনওটাই এখনও এসে পৌঁছয়নি। স্বভাবতই বিরক্ত জেলা পরিষদের কর্মকর্তাকরা।

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬৬টি প্রকল্পে প্রায় ১৫০০ কিমি পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ২০০০ সাল থেকেই শুরু হয়েছে ওই প্রকল্পের কাজ। জেলা পরিষদ দায়িত্বে থাকলেও সড়ক নির্মাণের পুরো ব্যয় বহন করে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্য গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন সংস্থা। রাস্তা তৈরির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাস্তা নির্মাণকারী ঠিকাদারি সংস্থার। অভিযোগ, বহুক্ষেত্রেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করছে না ঠিকাদারি সংস্থা। ফলে কিছু দিন যেতে না যেতেই সেগুলি বেহাল হয়ে পড়ছে।

ভগবানগোলার বাগদহরা-দস্তিনা ৯ কিমি লম্বা সড়কের লালগোলা থেকে জিয়াগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তায় প্রতিদিনই কয়েকশো ট্রেকার-লরি চলে। খুব বেশি হলে বছর পাঁচেক হয়েছে রাস্তাটি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই একবার পিচের রাস্তায় লাল মাটি ফেলে সারাইয়ের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা টেঁকেনি। বেহাল অবস্থা সাগরদিঘির হুকারহাট থেকে লক্ষীহাট পর্যন্ত ৪ কিমি লম্বা সড়কেরও। সেটিও মাত্র ৫ বছর আগে তৈরি হয়। গোপালদিঘি থেকে হরহরি ৫ কিমি রাস্তায় এখন বড় বড় গর্তে ভরা। আজিমগঞ্জ থেকে বালিয়া পর্যন্ত সড়কে গর্ত এতো বড় যে বৃষ্টির জল জমে কোথাও কোথাও তা জলাশয়ের আকার নিয়েছে। সুতির সুজনিপাড়া থেকে চক সৈয়দপুর রাস্তাটি তৈরি হয়েছে ২০০৮ সালে। বর্তমানে রাস্তার হাল এমনিই যে, প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। রঘুনাথগঞ্জের সুজাপুর থেকে নতুনগঞ্জের সড়কে পিচের অস্তিত্বটাই আর নেই।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কমলেশ চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, “জেলার শতাধিক রাস্তার অবস্থা বেহাল। সেগুলি সারাবার মতো অর্থ নেই জেলা পরিষদের হাতে। প্রায় আট মাস আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া বেহাল সড়কগুলি সারাতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রতিটি রাস্তা সারাইয়ের সম্ভাব্য খরচ হিসেব করে ১৬২ কোটি টাকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু না পাওয়া গিয়েছে টাকা, না মিলেছে চিঠির কোনও উত্তর।” তাঁর সাফ কথা, “যতদিন না সে টাকা পাচ্ছি ততদিন গ্রামবাসীদের রাস্তা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতেই হবে। জেলা পরিষদের কিছুই করার নেই।”

সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “জেলায় এ রকম শতাধিক রাস্তা অবিলম্বে সারানো দরকার। প্রতিদিন বেহাল সড়ক নিয়ে নালিশ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ জেলা পরিষদের কর্তারা। এতো দু’চার লক্ষ টাকার ব্যাপার নয় যে জেলা পরিষদ তার নিজস্ব তহবিল থেকে রাস্তা সারাই করে দেবে।” ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরি হওয়ার ফলে জেলায় যোগাযোগের উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বর্তমানে বেহাল সড়ক সেই উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলির সংস্কার নিয়ে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে বহুবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা সারানোর ব্যবস্থা হয়নি।”

রাজ্য পূর্ত দফতরের আরও এক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “যে কোনও রাস্তার স্থায়ীত্ব নির্ভর করে মাটি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, জলের নিকাশি এবং ভারী যান চলাচলের উপর। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে এক হাজারের বেশি জনবসতি এলাকায় দৈনিক ৪৫টি ভারী যান যাওয়ার উপযোগী ও তুলনায় কম জনবসতি এলাকায় দিনে ১৫টি করে ভারী যান যাওয়ার মতো করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ওই সব রাস্তায় তার কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলছে।” তাঁর মতে প্রতিটি সড়ক পথে সুষ্টু জল নিকাশি ব্যবস্থা নেই, তাছাড়া দেড়-দু’বছর অন্তর রাস্তাগুলি নিয়মিত মেরামত করা প্রয়োজন। অথচ এর কোনওটাই করা হয় না। কোনও কোনও রাস্তায় ১০ বছরেও সংস্কারের কাজে হাত পড়েনি। সেই কারণেই গ্রামীণ সড়ক এভাবে জেলা জুড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মীত অনেক সড়কেরই অবস্থা যে খুবই খারাপ তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অমলকান্তি মণ্ডলও। তিনি বলেন, “অত্যন্ত খারাপ ওই রাস্তাগুলি মেরামতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের আনুমানিক পরিমাণ রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম খারাপ রাস্তাগুলিরও তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এখনও কোনও উত্তর আসেনি। ফলে রাস্তাগুলি সারানোর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE