E-Paper

দলনেত্রীর হাতে তালিকা, চিন্তায় নেতারা

দলনেত্রীর কাছে এমন তালিকা থাকার খবরে শাসক দলের অনেক নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হৃদকম্পন শুরু হয়ে গিয়েছে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৪
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সরকারি প্রকল্পের জন্য কেউ টাকা চাইলে থানায় অভিযোগ জানান— গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে এসে এ ভাবেই উপভোক্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, সূত্রের খবর, সেদিন দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল দলনেত্রী বলেছেন, জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছে থেকে পাঁচ হাজার, দশ হাজার, পনেরো হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে, টাকা চাওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে সেই তালিকা রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছিলেন।

দলনেত্রীর কাছে এমন তালিকা থাকার খবরে শাসক দলের অনেক নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হৃদকম্পন শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব থানায় থানায় কাটমানির অভিযোগ পেলে মামলা করে আইনি পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে রেজিনগরের তৃণমূলের এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং এক জন পঞ্চায়েত সদস্যর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ায় রেজিনগর থানায় এফআইআর হয়েছে। যার জেরে আবাস প্রকল্প-সহ সরকারি প্রকল্পে যাঁরা টাকা নিয়েছেন তাঁদের অনেকেরই হৃদকম্পন শুরু হয়েছে।

বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে বলতে চাই আরও যাঁদের কাছে থেকে এমন টাকা নিয়েছে তাঁরা থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন। আমাদের জানালেও আমরা থানায় জানাব। যাঁরা সরকারি প্রকল্পের নাম করে টাকা নিয়েছেন তাঁদের শাস্তি হোক আমরা চাই।’’ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে টাকা নিলে আইনি পদক্ষেপ যেমন পুলিশ করবে, আমরাও তদন্ত করে দলগত পদক্ষেপ করব।’’

সূত্রের খবর, সেদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রেজিনগরের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম করে সেই এলাকায় আবাসের জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে বলেছেন। নওদা-সহ আর কয়েকটি ব্লকে আবাসের উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যাঁরা আবাসের উপভোক্তাদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। এফআইএর করে গ্রেফতার করা হবে, পদ কেড়ে নেওয়া হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যে কথার কথা নয়, তার প্রমাণ মিলেছে রেজিনগরে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা ছাড়ার পরের দিন রেজিনগরের আন্দুলবেড়িয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান রবিন ঘোষ এবং ওই ব্লকের রামপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্যর বিরুদ্ধে ৬ জন বাংলা আবাস যোজনার উপভোক্তার কাছে থেকে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরে দুটি এফআইআর করেছে। একটি আন্দুলবেড়িয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রবিন ঘোষের বিরুদ্ধে, অন্যটি রামপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য সত্যনারায়ণ ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে।

এক তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘সে দিনের বৈঠকে দিদি বলেছিলেন রেজিনগরের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত, নওদা-সহ বেশ কিছু এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আবাসের জন্য উপভোক্তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তার তালিকা রয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘দিদির কাছে জেলার সব খবরই যায়। দিদি সে সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি পদ কেড়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফলে যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন দিদির কথা শুনে তাদের বুক তো কাঁপবেই।’’

বিরোধীরা অবশ্য দাবি করছে, কাটমানি বন্ধ করা এত সহজ নয়। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব তা অস্বীকার করেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Murshidabad

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy