Advertisement
E-Paper

সুনসান রানাঘাটে থমকে প্রতিবাদ

সেই চেনা ভিড়টা উধাও। কনভেন্টের সামনে গিটার বাজিয়ে গান গাইতে দেখা গেল না প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের। দেখা গেল না কোনও মোমবাতি মিছিলও। দু’একবার শুধু ঘুরে গেলেন পুলিশ ও সিআইডি-র কর্তারা। চকিতে এমনটাই ছিল রানাঘাটের ওই কনভেন্ট চত্বরের রবিবারের ছবি।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৪২
সুনসান। রবিবার রানাঘাটের ওই কনভেন্ট চত্বরের চেহারা ছিল এমনটাই। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

সুনসান। রবিবার রানাঘাটের ওই কনভেন্ট চত্বরের চেহারা ছিল এমনটাই। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

সেই চেনা ভিড়টা উধাও। কনভেন্টের সামনে গিটার বাজিয়ে গান গাইতে দেখা গেল না প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যদের। দেখা গেল না কোনও মোমবাতি মিছিলও। দু’একবার শুধু ঘুরে গেলেন পুলিশ ও সিআইডি-র কর্তারা। চকিতে এমনটাই ছিল রানাঘাটের ওই কনভেন্ট চত্বরের রবিবারের ছবি।

রানাঘাটের কনভেন্টে ডাকাতি ও এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ১৩ মার্চ রাতে। সেই ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। মিছিল, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, অবরোধে সামিল হয়েছিল রানাঘাটও। ওই কনভেন্টের সামনে লোকজনের ভিড়ে তিল ধারনের জায়গা থাকত না। ঘটনার প্রতিবাদে ‘হোক পরিবর্তন’ স্লোগান তুলে রানাঘাট প্রতিবাদী মঞ্চও তৈরি করেছিলেন স্থানীয় কিছু ছেলেমেয়ে। তাঁরাও ওই স্কুলের সামনে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গানে, স্লোগানে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়া পর্যন্ত ওই প্রতিবাদ চলার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনার ন’দিন পরেও বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও কেউ ধরা পড়েনি। অথচ শনিবার সকাল থেকেই থমকে গেল সেই প্রতিবাদ। স্কুলের সামনে ভিড়টাও ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করল। এমনটা হল কেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (গত কয়েকদিনে যাঁদের নাম প্রকাশে আপত্তি ছিল না) স্থানীয় জনাকয়েক যুবকের প্রতিক্রিয়া, “ভয় দাদা, ভয়। এতবড় একটা ঘটনার এখনও পর্যন্ত কিনারা হল না। পুলিশ, সিআইডি হয়ে এখন তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে। অথচ আমাদের মতো যাঁরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন, তাঁদেরকেই পুলিশ এখন ‘টার্গেট’ করছে।” ওই যুবকদের কেউ প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্য, কেউ আবার শুধু মিছিলে হেঁটেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ এই ঘটনা নিয়ে যতটা না সক্রিয়, তার থেকে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় রোখার ঘটনায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিবাদীদের রুখতে পুলিশ এখন নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবার রাতে পুলিশ ওই প্রতিবাদী মঞ্চের এক সদস্যের বাড়িতে ও অন্য এক সদস্যের পাড়ায় গিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। তাঁদের একজনকে থানাতেও ডেকে পাঠায় পুলিশ। এক যুবক বলছেন, “পুলিশ চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। রানাঘাটের ঘটনা নিয়ে যা হচ্ছে তা তো সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। ফলে পুলিশ চাইছে যে কোনও উপায়ে এই প্রতিবাদ-আন্দোলন বন্ধ করতে। সেই কারণেও ইচ্ছে থাকলেও বাড়ির লোকজন আর চাইছেন না আমরা এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্য বিপদে পড়ি।”

রানাঘাটের এই প্রতিবাদী মঞ্চের কথা শুনেছেন অনেকেই। ফেসবুক তো বটেই সশরীরেও ওই মঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে যোগ দিতে চাইছেন অনেকেই। রবিবার দুপুরে তেমনই এক যুবক কৃষ্ণনগর থেকে এসেছিলেন রানাঘাটে। কিন্তু তিনি এসে দেখেন স্কুলের সামনে কোনও মঞ্চও নেই, নেই গিটার হাতে গান গাওয়া সেই সব ছেলেমেয়েরাও। পরে অবশ্য বিষয়টি জানতে পেরে ওই যুবকের আক্ষেপ, “এটা কিন্তু ঠিক হল না। এ ভাবে প্রতিবাদ বন্ধ করা যায় না!”

যদিও বিষয়টিকে এ ভাবে দেখতে নারাজ জেলা পুলিশের এক কর্তা। তিনি বলেন, “প্রতিবাদ যে কেউই করতে পারেন। তা নিয়ে পুলিশের সমস্যা থাকার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে দেখেতে হবে পুলিশ যাঁদের সঙ্গে কথা বলছে, বা থানায় ডেকে পাঠাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আছে কি না।”

রবিবার সিআইডি ও পুলিশের কর্তারা সকাল থেকে কয়েকবার এসেছিলেন ওই কনভেন্টে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বেশ কয়েকজন অপরাধীদের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে তাদের গতিবিধির উপরেও। রানাঘাট শহর ও লাগোয়া এলাকার আরও তিন জন যুবককে এ দিন আটক করা হয়েছে।

police CID Ranaghat nun rape case convent CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy