Advertisement
E-Paper

কারখানা বন্ধের নোটিস, অনিশ্চিত শ্রমিক ভবিষ্যৎ

মঙ্গলবার সকালে কল্যাণীতে বন্ধ করে দেওয়া হল একটি রাসায়নিক কারখানা। সোমবার মাঝরাতেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে গেটে সাসপেনসন অব ওয়ার্কের নোটিস দেখেন। তার ফলে শতাধিক কর্মী কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২১
বন্ধ কারখানার সামনে শ্রমিকেরা। — নিজস্ব চিত্র

বন্ধ কারখানার সামনে শ্রমিকেরা। — নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলবার সকালে কল্যাণীতে বন্ধ করে দেওয়া হল একটি রাসায়নিক কারখানা। সোমবার মাঝরাতেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে গেটে সাসপেনসন অব ওয়ার্কের নোটিস দেখেন। তার ফলে শতাধিক কর্মী কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন।

গত এক মাস ধরে বোনাসের অঙ্ক নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের গন্ডগোল চলছিল। তা নিয়ে দু’পক্ষ ঐক্যমত না হওয়ায় ঝামেলা বাড়ে। সোমবার শ্রমিকরা কারখানায় তৈরি মালপত্র বের করতে বাধা দেয়। তার পরেই কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।

কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে ৭০-এর দশকে অ্যালক্রোম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের এই কারখানাটি তৈরি হয়। কারখানাটিতে জুতোর জন্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রং এবং রাসায়নিক তৈরি হয়। এক সময় কারাখানটির অবস্থা ভালই ছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে কারখানার আর্থিক অবস্থা আগের মতো নেই।

বাম জমানায় এক সময় সিপিএমের শ্রমিক আন্দোলনে কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে একের পর এক কারখানা যখন পাততাড়ি গোটাচ্ছিল, অ্যালক্রোম কেমিক্যাল তখনও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। বর্তমানে কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে যে ক’টি কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন হয়, অ্যালক্রোম কেমিক্যাল তাদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কারখানার শ্রমিক সংখ্যা ১০৭ জন। কারখানার তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা প্রদীপ বিশ্বাস জানান, তাঁদের মজুরী অত্যন্ত কম। সেই জন্য গত কয়েক বছর ধরে পুজোর সময় তাঁদের ২০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এ বছর কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়ে দেয়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হবে।

তার পর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। প্রদীপবাবু জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারি হারে বোনাস দেওয়ার কথা বলার পর শ্রমিকদের তরফ থেকে সরকারি হারে দৈনিক ৩৪৫ টাকা মজুরির দাবি জানানো হয়। বর্তমানে তাঁরা ২৮৭ টাকা হারে মজুরি পান। তাঁরা কিন্তু সেই যুক্তি মানেননি।

তার ফলে শ্রমিকরা পুজোয় কোনও বোনাস পাননি। অথচ গত কয়েক বছর ধরে শ্রমিকদের ২০ শতাং হারেই বোনাস দেওয়া হয়েছে। গত বছর কর্তৃপক্ষ এক সঙ্গে তা দিতে পারেননি বলে, দু’বারে তা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এ বারও আমরা দাবি জানিয়েছিলাম যে, আগের বারের মতো দু’বারের মতোই কিস্তিতে বোনাস দেওয়া হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা না মানায়, শেষ পর্যন্ত শ্রমিকরা অসন্তোষ শুরু করে।’’

কারখানা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন যে, গত কয়েক বছর তাঁরা ২০ শতাংশ হারে বোনাস দিয়েছিলেন। কারখানার ম্যানেজার ওপি সিংহ জানান, এ বার সংস্থার আর্থিক হাল খারাপ বলে তাঁরা ৮.৩৩ হারে বোনাস দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু শ্রমিকরা রাজি হননি।

তা হলে সরকারি নিয়ম মেনে শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি কেন দেওয়া হচ্ছে না? ওপি সিংহ বলেন, ‘‘সেটা অন্য প্রসঙ্গ। তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু, তা বলে মাল বোঝায় লরি আটকে দেওয়া হবে?’’

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার মাল বোঝাই লরি কারখানা থেকে বেরনোর সময় শ্রমিকরা তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। কর্তৃপক্ষ বার বার লরি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও শ্রমিকরা তা শোনেননি। শ্রমিকরা অবশ্য সেই অভিয়োগ অস্বীকার করেছেন। লরি বের করতে না পেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ সোমবার মাঝরাতে কাজ বন্ধ করে দেন। তার পরেই সকালে কারখানা বন্ধের নোটিস পড়ে।

নদিয়া জেলা আইএনটিটিএউসি-র সভাপতি সুনীল তরফদার বলেন, ‘‘বোনাস, নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদেল গন্ডগোল চলছিল। আমরা আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।’’

Chemical factory Workers Notice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy