ডাকঘরে টাকা রাখার সুবিধের কথা বোঝাচ্ছেন কর্তারা।— নিজস্ব চিত্র।
কম সময়ে দ্বিগুণ টাকা ফেরত!
বেআইনি বেশ কিছু লগ্নি সংস্থার এমন ফাঁদে পা দিয়ে গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা খুইয়েছেন গ্রামের মানুষ। খেতই যে গ্রামের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ, নওদার সেই পরেশনাথপুর গ্রামকেই এ বার মডেল গ্রাম করতে উদ্যোগী হল মুর্শিদাবাদ জেলা ডাক বিভাগ। পরেশনাথপুরও পণ করেছে, আর কোনও প্রলোভনে পা দিয়ে মেহনতের টাকা নষ্ট হতে দেবে না। ঠকে শিখে পোড় খাওয়া ওই গ্রাম এখন আস্থা রাখছে ডাকঘরেই।
পরেশনাথপুরে প্রায় ৯১২ টি পরিবারের বাস। গ্রামের চারপাশে সবুজ খেত, পানের বরজ। খেতভর্তি বেগুন, পটল-সহ নানা রকম মরসুমি সব্জি ও পাট। সম্বৎসর চাষআবাদ করে সংসারও চলে যায়। হাতে কিছু টাকাও জমে। এ বার সেই টাকা যাতে গ্রামের মানুষ আর নষ্ট না করে সেই কারণে গত বৃহস্পতিবার গ্রামে একটি শিবির করে জেলা ডাক বিভাগ। সেখানে গ্রামীণ জীবন বিমা-সহ লাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও গ্রামবাসীদের বলেন ডাক বিভাগের কর্তারা। এ দিন গ্রামের প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা গ্রামীণ জীবন বিমাও করেন।
জেলা ডাক অধীক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই গ্রামের মানুষ যাতে আর প্রতারিত না হন সেই কারণেই জেলা সদর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামকেই মডেল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ যাতে ডাক বিভাগের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ও পরিকল্পনার কথা জানতে পারে তার সব ব্যবস্থা করা হবে। গ্রামের মানুষ যদি ডাকঘরে যেতে না পারেন তাহলে প্রয়োজনে গ্রামে এসেই যাবতীয় পরিষেবা দেবেন ডাক বিভাগের কর্মীরা।
দাসপাড়া প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বিকাশ মণ্ডল জানান, সব্জি ও পান চাষ করে গ্রামের মানুষের হাতে কাঁচা টাকা থাকে। সেই খবর পেয়েই এই গ্রামে থাবা বসিয়েছিল বেশ কিছু বেআইনি লগ্নি সংস্থা। নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তারা বিস্তর টাকাও তুলেছিল। গ্রামের মানুষও তাদের উপর বিশ্বাস করে সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। তারপর যখন ভুল ভাঙল তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ‘‘এখন ডাক বিভাগের এই উদ্যোগে দু’তরফই লাভবান হবেন। ডাকঘরগুলিও তাদের বিভিন্ন প্রকল্প মানুষের কাছে যেমন পৌঁছে দিতে পারবে। গ্রামের মানুষও নিরাপদ জায়গায় টাকা রাখতে পারবেন।’’ বলছেন বিকাশবাবু।
গ্রামের পার্থ চক্রবর্তী, স্বরূপ মণ্ডল, সন্তু মণ্ডলরা জানান, গ্রামেও ডাকঘর আছে। কিন্তু তাঁরা ভাবতেন সেখানে টাকা রাখলে সুদ কম। তাই অন্য কোম্পানির লোকজন এসে যখন কম সময়ে অনেক বেশি টাকা সুদের কথা বলেছিল তখন তাঁরা আর কোনও কিছু তলিয়ে ভাবেননি। কিন্তু পরে যখন তাঁরা ভুল বুঝতে পারলেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। গত মার্চে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমতলায় ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন প্রতিবাদও করেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি বলে অভিযোগ। তারপরেই ডাকঘরের এমন উদ্যোগ দেখে গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘‘ডাকঘরে টাকা রাখলে সুদ মেলে। সবথেকে বড় কথা টাকাও সুরক্ষিত থাকে। গ্রামে এসেই ডাক বিভাগের লোকজন এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে চাই না।’’
গ্রামের বধূ গৌরী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ বার যা করার তা ভেবেচিন্তেই করছি। হাতে পেঁয়াজ বিক্রির টাকা ছিল। সেই টাকা ডাকঘরেই রেখে দিয়েছি।’’ পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুদীপ মণ্ডল জানান, গ্রামের মানুষের হাতে টাকা থাকে। কিন্তু সেই টাকা কোথায় রাখলে সুরক্ষিত থাকবে সেটা অনেকেই এতদিন জানতেন না। তাই তাঁরা ঠকেছেন। এখন মানুষ যদি সরকারি ভাবে সেই সুযোগ সুবিধাগুলো গ্রামে বসেই জানতে পারেন তাহলে তো সেটা খুবই ভাল।
মহকুমা ডাক নিরীক্ষক রবীন্দ্রনাথ মুর্মু বলেন, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত একটি শিবির করেছি। সেখানে গ্রামের মানুষের ভাল সাড়াও পেয়েছি। গোটা গ্রামকে ডাকঘরমুখী করাটাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy