মুক্তি: কাজের ছলে। নিজস্ব চিত্র
রোজ দিনে চার ঘণ্টা, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংশোধানাগারের উন্মুক্ত চত্বরে থাকতে পারবেন ওঁরা। খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সকলেই।
ওঁদের কেউ ১৯৯৭ সাল থেকে জেল জীবন কাটাচ্ছেন, কেউ রয়েছেন ২০১১ সাল থেকে। রাজনৈতিক বা জমি বিবাদে খুনের দায়ে তাঁদের বর্তমান ঠিকানা বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। জেল সুপার টি আর ভুটিয়া জানান, গত ২৭ মার্চ থেকে এ রকম ১৪ জন কয়েদিকে বাইরে কাজ করার জন্য ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইজি (কারা) । জেলের মধ্যে আচরণ ও শৃঙ্খলাবোধ খতিয়ে দেখে ১৪ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
বহরমপুর সংশোধনাগারে এখন কয়েদি ও বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ২,৬৫৯। তার মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ কয়েদি ১,১১৪ জন। জেল সুপার বলেন, ‘‘এর আগে দমদম আর মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছিল কারা দফতর। এখানে ১৪ জন দিয়ে শুরু হলেও আগামী দিনে সংখ্যাটা বাড়তে পারে। কিন্তু এখনই তার কোনও নির্দেশ আসেনি।
কারা এই ১৪ জন?
বীরভূমের রামপুরহাটের ধলুয়া শেখ, গোলাম গাউস ও হারাধন লেট, নানুরের আনোয়ার শেখ ও সূচপুরের নেক্তার শেখ, মালদহে বৈষ্ণবনগরের ভাদু শেখ, ইসলামপুরের নুরুল শেখ, হরিহরপাড়ার মেহরাজ শেখ, ডোমকলের বিশু মণ্ডল, সালারের নবি মোল্লা, পাঁচগ্রামের আতিকুর শেখ, রানিনগরের হান্নান মোল্লা, শক্তিপুরের নকুল নন্দীরা সকালে জলখাবার খেয়ে কোদাল-কাস্তে আর ঝুড়ি হাতে মূল গেট দিয়ে বেরিয়ে সংশোধনাগার চত্বরে আগাছা সাফ করার কাজে লেগে পড়েন। এক সঙ্গে বসে চা খাওয়া, খোশগল্পও চলে।
ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়তেই উদাস ওঁরা। ধলুয়া শেখ বলেন, ‘‘ছেলে বড় হচ্ছে। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা রয়েছেন। একা হাতে দেখভাল করছে স্ত্রী। বাড়ির কথা মনে পড়লেই খারাপ লাগে এখন।’’ আনোয়ার শেখ জানান, পরিবারে তাঁর মেয়েই প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে এ বছর। তাঁর তা দেখতে যাওয়া হল না।
সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ হয় তাতে অভিনয় করেন নকুল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘তাসের দেশ, তোতা কাহিনী, রক্তকরবী অবলম্বনে যক্ষপুরী নাটকে অভিনয়ের জন্য কলকাতা, দুর্গাপুর গিয়েছি। কিন্তু পরিবারের লোকজনকে তা দেখাতে পারিনি।’’ ছ’মাস অন্তর অবশ্য সাত দিনের জন্য ‘প্যারোলে’ বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মেলে। তাতে তৃষ্ণা মেটে না, বরং আরও বাড়ে। আর বাড়ে কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা।
এখন রোজ খোলা হাওয়ায় বেরোতে পেরে ঘরের ডাকটাই আরও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন ওঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy