Advertisement
E-Paper

অন্ধকার ফুঁড়ে যেন ঝড় উঠল হাততালির

মাস্টারমশাই যখন পড়া বোঝান, সে কান খাড়া করে শোনে। কিন্তু পড়া ধরলে কোন সহপাঠী উত্তর দেবে বলে হাত তুলল, তার নজরে তা আসে না। হাততালি দিয়ে সে জানান দেয়, প্রশ্নের জবাব তার জানা।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৮ ০১:৪২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জন্ম থেকেই মেয়েটি চোখে দেখতে পায় না।

ব্ল্যাকবোর্ডে চক ঘষার খসখস আওয়াজ তার কানে আসে, ফার্স্ট বেঞ্চে বসলে চুলে উড়ে এসে পড়ে চকের গুঁড়ো। কিন্তু কালো চৌকোয় সাদা আখরে কী যে লেখা হয়, তা সে ঠাহর করতে পারে না।

মাস্টারমশাই যখন পড়া বোঝান, সে কান খাড়া করে শোনে। কিন্তু পড়া ধরলে কোন সহপাঠী উত্তর দেবে বলে হাত তুলল, তার নজরে তা আসে না। হাততালি দিয়ে সে জানান দেয়, প্রশ্নের জবাব তার জানা।

আর, এই করেই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে সুতির গোঠা আজিজুর রহমান হাইস্কুলের বেবি দাস। স্কুলের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন কৃতিত্ব এই প্রথম। গঙ্গাপাড়ে বিএসএফ ক্যাম্প লাগোয়া স্কুলের দু’টি বাড়িতে ৫৬টি ক্লাসঘর। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রীর দায়িত্বে ৫৯ জন শিক্ষক। রয়েছে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থাও। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর মতো পরিকাঠামো ভালই রয়েছে। কিন্তু দৃষ্টিহীন পড়ুয়ার যে বিশেষ সহায়তা লাগে, তা ওই স্কুলে কোথায়?

প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারি বলছেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ হল, সমস্ত বিশেষ শিশুকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি নিতে হবে। তাদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করার ব্যবস্থাও রয়েছে সর্বশিক্ষা মিশনের। কিন্তু বেবির জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি।’’

দৃষ্টিহীনদের পড়ানোর জন্য ব্রেইলে ছাপা বই লাগে। বেবির জন্য তা জোগাড় করার উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে শিক্ষকেরাই নিজেদের মতো করে উপায় বের করেছেন। বাংলার শিক্ষক মহম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, “কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি জানা ছিল না আমাদের। ২৬৮ জনের ক্লাসে বিশেষ কোনও ব্যবস্থাও করা যায়নি। তাই যা কিছুই পড়াতাম, তা জোরে-জোরে বলে যেতাম। বোর্ডে লিখলেও, যা লিখছি তা মুখেও বলতাম। যখন কাউকে প্রশ্ন করতাম, তার নামটাও বলতাম যাতে বেবি বন্ধুদের সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারে।”

ইংরেজির শিক্ষক কলিমুদ্দিন বলেন, “প্রশ্ন ধরলে ছাত্রছাত্রীরা হাত তুলে উত্তর দিতে চায়। বেবি তো তা দেখতে পেত না। সে হাততালি দিয়ে জানাত, উত্তর তার জানা। ক্লাসের শেষে সে দিন যা পড়ানো হল, তা প্রশ্নোত্তর আকারে বেবিকে আর এক বার বলে ঝালিয়ে দিতাম। ওর বোন তা রেকর্ড করে নিত। বেশির ভাগ দিনই সে ক্লাসে আসত দিদির সঙ্গে।”

বেবিকে নিয়ে গত আঠারো মাসে কী-কী সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা নিয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে স্কুল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ছেলেমেয়েদের যাতে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়। মুর্শিদাবাদের সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প আধিকারিক সৌগত মাইতি বলেন, “স্কুলগুলিকে কী ভাবে প্রস্তুত করে তোলা যায়, আমরা তা দেখছি।’’

School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy