Advertisement
০২ মে ২০২৪

হলুদ শাড়ি আর বাংলা ভ্যালেন্টাইন

দুপুর ফুরিয়ে আসছে, এ সব দিন অকারণে বড় দ্রুত ফিকে হয়ে আসে। শেষ শীতের গ্রামীণ ঠান্ডা আর একটু পরেই ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়। আলোটা আর একটু পরেই সন্ধের আঁধারে টুপ করে ডুব দেবে। ভাঙা ভাঙা মন, চুপি চুপি কষ্ট। পাশাপাশি, ক্লাস নাইন আর টেন, স্কুলের সিঁড়িতে চুপ করে আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৩
Share: Save:

হলুদ শাড়ি, অনভ্যস্ত আঁচল থেকে থেকেই ধুলোয় লুটোপুটি। ঢলঢলে পাঞ্জাবির হাতায় পুরনো কালি। পাশাপাশি, কিন্তু খানিক দূরত্ব রেখে স্কুলের সিঁড়িতে।

দুপুর ফুরিয়ে আসছে, এ সব দিন অকারণে বড় দ্রুত ফিকে হয়ে আসে। শেষ শীতের গ্রামীণ ঠান্ডা আর একটু পরেই ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়। আলোটা আর একটু পরেই সন্ধের আঁধারে টুপ করে ডুব দেবে। ভাঙা ভাঙা মন, চুপি চুপি কষ্ট। পাশাপাশি, ক্লাস নাইন আর টেন, স্কুলের সিঁড়িতে চুপ করে আছে।

ভূগোল দিদিমণির কপালে ভিসুভিয়াস ভাঁজ। শেষ বিকেলে এক মুঠো হেসে মৃদু প্রশ্রয়ের অঞ্জলি শুধু গেমস স্যারের, ‘কী রে, বাড়ি ফিরবি না তোরা!’ স্যরের সাইকেল বিন্দু হয়ে মিলিয়ে আসে মাঠের বাঁকে।

নেট-নক্ষত্র এবং রঙিন ক্রিকেটের হালফিলের দুনিয়ায় এখনও হলুদ শাড়ি আর ঢলঢলে পাঞ্জাবি— পড়ুয়া বাঙালির নিজস্ব ভ্যালেন্টাইন, অবিকল আগের মতো।

পুরনো চেহারা নিয়ে আগের মতোই খিটখিটে মেজাজ— ‘চাঁদা চাইতে এলি যে, বল দেখি সরস্বতী বানানটা?’ দরজায় ঠেস দিয়ে স্যান্ডো গেঞ্জি, চশমার আড়ালে জরিপ করে, সদ্য গোঁফের রেখা, হাঁটু ছড়ে যাওয়া পাড়ার উঠতি বেয়াড়াদের!

—কই, হয়ে গেল! বানানটাই শিখলি না আবার চাঁদা।’ বাড়ানো রসিদে ত্যাড়াবাঁকা অক্ষরে পঞ্চাশ টাকা, মুদ্রাস্ফীতির দেওয়ালে মাথা কুটে ঝুরঝুর করে ঝরে, ‘‘কাকু যা পারেন দিন না!’’ সাত হাত ঘোরা একটা কুড়ি টাকার নোট

— নিলে নে। আর পড়াশোনাটা কর, ফেল করবি ফেল, যত্তসব...’

সে রাতেই বাগানের হৃষ্ট চন্দ্রমল্লিকা নিঃসারে উধাও হয়ে গেল। গোলাপের ভাঙা ডাল, ফাটা টব, ছিন্ন গাঁদার পাশে সকালের ধমক যেন পাল্টা অনুশাসন হয়ে ছড়িয়ে রইল উঠোনময়। সে হিংসায় ব্লু হোয়েল নেই। শুধু রয়ে গিয়েছে, আপামর কিশোরবেলার নীল কুয়াশার মতো আবহমান অভিমান।

আবহমানই তো... তিন চাকার ভ্যান রিকশায় সরস্বতীর রাঙা শাড়ির আঁচল মুখের উপর নাছোড় ঝাপটা দিলে সেই কবেকার মতোই মনে পড়ে হলুদ শাড়ির কোড়া সুঘ্রাণ। ‘কী রে, কী ভাবছিস?’ সরস্বতীর কোমর জাপটে বয়ঃসন্ধির এগারো ক্লাস চিমটি কাটে। কাটুক। টলোমলো ভ্যান রিকশার মাঝেই বুজকুড়ি কাটে...হলুদ শাড়ি, তুমি তো জান/ তোমার সঙ্গে ভাব, তোমার সঙ্গেই আড়ি!

স্কুলের উঠোনে লম্বা হয়ে পড়েছে সরস্বতীর ছায়া। ফুরিয়ে আসছে পুজোর দুপুর। ‘চলি রে’, পাঁজরে মেঘ ডাকে— ‘আর একটু বোস না’... বলা হয় না। বাঙালি কিশোরবেলার হলুদ বিকেল মনে মনে বলে, ‘আসছে বছর... আবার হবে তো!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Festival Saraswati Puja Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE