Advertisement
E-Paper

পনেরো দিনে সাত মানসিক রোগীর মৃত্যু

প্রশান্তবাবুর দাবি, ‘‘আমি স্বেচ্ছায় এই পদ ছাড়তে চাইছি। হাসপাতালের সুপার হয়েও কর্মীর অভাবে ঠিক মতো পরিষেবা দিতে পারছি না। হাসপাতালে গাড়ি নেই। আগাম না জানিয়ে যখন তখন যে কেউ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে আসছেন। আমার নিরাপত্তা কোথায়?’’

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০১
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সামনে চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সামনে চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

হপ্তা দুয়েকের মধ্যে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সাত জন রোগী মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন মারা গিয়েছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এক জন মারা গিয়েছেন মানসিক হাসপাতালে। এমন ঘটনার পরে প্রশ্নের মুখে মানসিক
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কী কারণে সাত জন রোগী এ ভাবে মারা গেলেন তা জানতে চেয়ে বুধবার সকালে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বহরমপুর শহর কংগ্রেস। ঘটনার তদন্ত চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তারা স্মারকলিপিও দেয়। এ দিনই হাসপাতালের সুপার প্রশান্তকুমার চৌধুরী সুপার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি দিয়েছেন।

প্রশান্তবাবুর দাবি, ‘‘আমি স্বেচ্ছায় এই পদ ছাড়তে চাইছি। হাসপাতালের সুপার হয়েও কর্মীর অভাবে ঠিক মতো পরিষেবা দিতে পারছি না। হাসপাতালে গাড়ি নেই। আগাম না জানিয়ে যখন তখন যে কেউ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখাতে আসছেন। আমার নিরাপত্তা কোথায়?’’

মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মানসিক হাসপাতালের রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। গাফিলতি পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন বিকেলে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল ঘুরেও দেখেন। সুপারের পদত্যাগ প্রসঙ্গে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘সুপার তাঁর পদত্যাগের চিঠি দিয়েছে। আমরা সেটা স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দেব।’’

বহরমপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি অতীশ সিংহের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল সুপার আবাসিক পদ। অথচ সুপার এখানে থাকেন না। মানসিক হাসপাতালে শীতকালে রোগীদের ঠিক মতো পোশাক, গরম জল দেওয়া হয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সাত জন রোগীমৃত্যুর দায় এড়াতে পারেন না’’

যদিও হাসপাতাল সুপার প্রশান্তবাবুর দাবি, ‘‘মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।’’ তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি প্রশান্তবাবু। তাঁর দাবি, “আমি নিয়মিত বহরমপুরেই থাকি। বাইরে থেকে যাতায়াত করি, এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না।”

এই হাসপাতালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানসিক রোগীদের পুনর্বাসনের কাজ করে। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার রত্নাবলী রায়ের অভিযোগ, প্রতি বছর শীতকালে এ ভাবে রোগীমৃত্যু হয়। রোগীদের গরম জলের জন্য গিজারে ব্যবস্থা করতে রোগী কল্যাণ সমিতিকে জানানো হয়েছে। কিন্তু গরম জলে রোগীদের হাত পুড়বে এই অজুহাতে গিজার লাগানো হয়নি।

রত্নাবলীর অভিযোগ, ‘‘আমরাও মানসিক রোগীদের কল্যাণের জন্যই কাজ করি। অথচ এ দিন কিছু না জেনেই শহর কংগ্রেসের সভাপতি বিক্ষোভ দেখানোর সময় আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। বিষয়টি আমি অধীর চৌধুরীকেও ফোন করে জানিয়েছি।’’ অতীশবাবুর দাবি, ‘‘দুর্ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না। ওই সংস্থা তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করে না। আমরা শুধু সেটাই বলেছি। বিষয়টি নিয়ে অধীরদার সঙ্গে আমার
কথাও হয়েছে।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘শুধু বহরমপুর বলেই নয়, রাজ্যের সমস্ত মানসিক হাসপাতালের হাল অত্যন্ত হতাশাজনক। রোগীদের অবহেলায় ফেলে রাখা হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও মেলে না। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে কী ভাবে এতগুলো রোগী মারা গেলেন তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।’’

Hospital patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy