Advertisement
E-Paper

রাতদুপুরে জাতীয় সড়ক ধরে ঘোড়া ছোটায় সাহেব ভূত

ডহর ধারে তেনারা আসেন মাঝ রাতে আর বিল পাড়ের মাঠে। সে এক নিভু নিভু আলো, রাতভর... হ্যারিকেনের আলো তেরছা করে পড়েছে, বাদল সাঁঝে এমন বৃষ্টি-ঘন গপ্পো শুনতে সেই মাঠ-পুকুর-খালপাড় ধরে হাঁটল আনন্দবাজার।বেলডাঙার সন্তোষরঞ্জন দাসের ঘরে প্রতিদিনের মতো হাজির স্থানীয় কয়েক জন কিশোর। সন্তোষ ভাল গল্প বলতে পারেন। ভূত, প্রেত, জিন, পরি, ব্রহ্মদত্যি, গোদানো—তাঁর ঝুলিতে সব আছে।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০

সন্ধ্যা নামতেই তুমুল বৃষ্টি। লোডশেডিং-এর সৌজন্যে তামাম শহর অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। যে দু’একটি দোকান খোলা রয়েছে সেখানে মোমবাতি জ্বলছে।

বেলডাঙার সন্তোষরঞ্জন দাসের ঘরে প্রতিদিনের মতো হাজির স্থানীয় কয়েক জন কিশোর। সন্তোষ ভাল গল্প বলতে পারেন। ভূত, প্রেত, জিন, পরি, ব্রহ্মদত্যি, গোদানো—তাঁর ঝুলিতে সব আছে। আর সেই গল্পের লোভেই তাঁর একচিলতে ঘরে বিকেলের পর থেকেই ভিড় বাড়ে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্তু বলল, ‘আজ রাতে আর কারেন্ট আসবে বলে মনে হয় না।’

বেজার মুখে বিকাশ বলল, ‘মনে হওয়ার আবার কী আছে রে! এমন বৃষ্টির পরে কোন দিন কারেন্ট আসে শুনি?’

এ বার খেই ধরে অতনু, ‘তোরা কি আবার ঝগড়া শুরু করবি? নাকি গল্পটা শুনতে দিবি?’

তক্তপোশে বসে সন্তোষ চিনি ছাড়া চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন, ‘শোন, আজ তোদের সাহেব ভূতের গল্প বলি...’

মুখের কথা শেষ না হতেই সমস্বরে আওয়াজ উঠল, ‘সাহেব ভূত!’

সন্তোষ শুরু করেন, ‘শোন, এখন যে পোড়ো ডাকবাংলোটা দেখছিস, ইংরেজ আমলে সেখানে হইহই ব্যাপার ছিল। দিনরাত সাহেব-মেমদের ব্যস্ততা। কখনও ঘোড়া ছুটিয়ে কেউ আসছেন। কেউ আবার বেরিয়ে যাচ্ছেন রাতদুপুরে। ওই ডাকবাংলোর আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করার সাহস ছিল না কারও।’

সন্তু বলল, ‘কিন্তু জেঠু, এখনও তো সন্ধ্যার পরে ওই এলাকায় কেউ যেতে পারে না।’ সন্তোষ বলেন, ‘কেন লোকজন এত ভয় পায়, সেই গল্পটাই তো তোদের বলছি।’

চায়ের কাপে ফের চুমুক দিয়ে সন্তোষ শুরু করেন, ‘৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বড়ুয়া মৌজায় প্রায় তিন বিঘা জমির উপরে ওই ডাকবাংলো তৈরি করেছিল সাহেবরা। শেষের দিকে ওই বিরাট ডাকবাংলোয় মাত্র এক জন সাহেব থাকতেন। তাঁর একটা তেজি ঘোড়া ছিল। সেই ঘোড়ায় চেপে তিনি নানা জায়গায় ঘুরতেন। একদিন সেই সাহেব ওই বাংলোয় আত্মহত্যা করে। সাহেব মরে যাওয়ার পরে বাংলোটা পড়েই থাকত। কেউ সেখানে ঢুকতে সাহস পেত না। যারাই যেত তারাই দেখত, নিজের বাগানে সাহেব তার সেই তেজি ঘোড়ার পিঠে চেপে ঘুরছে।’

ঘরের মধ্যে পিন পড়ার স্তব্ধতা। মোমবাতি গলে চলেছে। সকলের চোখ সন্তোষের দিকে। গলাটা ঝেড়ে সন্তোষ ফের শুরু করেন, ‘এক বার কলকাতা থেকে এক ভদ্রলোক এসেছিলেন রাতে ওই বাংলোতে থাকবেন বলে। অনেকেই নিষেধ করেছিল তাঁকে। কিন্তু কলকাতার সেই সাহসী বাবু কারও কথা শোনেননি। বলেছিলেন, ‘বহু দিশি ভূতের সঙ্গে খোশগল্প করেছি। আজ না হয় সাহেব ভূতের সঙ্গে চোস্ত ইংরেজিতে আড্ডা দেব।’ কিন্তু তাঁর সেই সাধ অবশ্য পূরণ হয়নি। মাঝরাতে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি দেখেন, ঘোড়ায় চেপে সেই সাহেব তাঁর শোওয়ার ঘরে এসে কটমট করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।’

অতনু জানতে চাইল, ‘আচ্ছা, জেঠু ওই সাহেব ভূত কি শুধু বাংলোতেই ঘোরাফেরা করে? বাইরে কেউ তাকে দেখেনি?’ সন্তোষ এ বার একটু ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, ‘তোরা না সবুর করতে জানিস না। আস্তে আস্তে সবটাই বলব। একটু অপেক্ষা কর বাছা। সেই সাহেব ভূতের কারণে জাতীয় সড়কে কত দুর্ঘটনা হয়েছে, জানিস? এ রকম বহু ট্রাকের চালক ও খালাসিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সুনসান রাস্তা। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে আঁধার ফুঁড়ে তীব্র গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রাক। আচমকা চালক দেখেন, রাস্তার বাঁ দিক ধরে হেঁটে চলেছে বিরাট সাইজের একটা ঘোড়া। আর তার পিঠে টুপি মাথায় বসে রয়েছে এক সাহেব। সাহেবের ঘোড়াকে যে ট্রাক ওভারটেক করতে গিয়েছে সেই ট্রাকই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তার পর থেকে রাতবিরেতে বেলডাঙার উপর দিয়ে ট্রাক নিয়ে যাওয়ার সময় সাবধান থাকত চালকেরা। সাহেব আর তার ঘোড়াকে দেখলেই গাড়ির গতি কমিয়ে দিত তারা। তার পর এক সময় সাহেব আর ঘোড়া মিলিয়ে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচত তারা।’ দমকা বাতাসে ঘরের মোমবাতিটা গেল নিভে। আঁধার পথে ও কীসের শব্দ? টগবগ...টগবগ....। বহু দূর থেকেও আওয়াজটা স্পষ্ট।

(চলবে)

monsoon Scary Story
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy