Advertisement
E-Paper

TET Examination: স্কুলে চাকরির আশায় থেকে মাঝদরিয়ায়

অভিজিৎদের সামান্য কিছু জমি আছে। সেখানে চাষ করে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন তাঁর বাবা। স্কুলে চাকরির আশায় বসে বয়স বেড়েছে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৫:৩৬

নিজস্ব চিত্র।

হাতে আর মাত্র একটা বছর। তার পর আর পরীক্ষায় বসতে পারবেন না তিনি। তাই স্কুলে চাকরির আশা এক রকম ছেড়েই দিয়েছেন। চাকরির প্রসঙ্গ উঠতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, “মনে হয় না আর চাকরি পাব। সংসারটা কী ভাবে টেনে নিয়ে যাব, বুঝে উঠতে পারি না।”

বয়স ৩৯। বাড়িতে বিধবা মা, স্ত্রী-সন্তান আছেন। গৃহশিক্ষকতা করে কোনও মতে সাংসার চালাচ্ছেন করিমপুরের বিধান দে। ২০১৪ সালে যখন টেট পরীক্ষা দেন, চোখে এক রাশ স্বপ্ন ছিল। ভেবেছিলেন মেধা আর পরিশ্রম দিয়েই জীবনের অন্ধকার দূর করবেন। দু’বার মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিধান বলেন, “আমাদের অভাবের সংসার। ফলে আমাকে কেউ টাকা দিলে চাকরির প্রস্তাব দেয়নি। সকলেই জানে, টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। কোনও নেতামন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ নেই।” অগত্যা রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন, মিটিং-মিছিলে যান বিধান। তাতে যদি কিছু হিল্লে হয়।

মুরুটিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম তারকগঞ্জের অভিজিৎ সরকারও ২০১৪ সালে টেট পাশ করেছেন। মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন ২০১৬ সালে। ভেবেছিলেন, স্কুলের চাকরিটা হয়ে যাবে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, সে আশা ততই আবছা হয়েছে। কানে এসেছে, চাকরি হচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে। পরিচিত কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়ে বসে আছে, নিয়োগপত্রও পেয়ে গিয়েছে কেউ কেউ।

অভিজিৎদের সামান্য কিছু জমি আছে। সেখানে চাষ করে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন তাঁর বাবা। স্কুলে চাকরির আশায় বসে বয়স বেড়েছে। বিকল্প পেশার সন্ধান করতে করতে বছর পঁয়ত্রিশের অভিজিৎ এখন গ্রামীণ চিকিৎসক। গাঁয়ের হাটে ছোট চেম্বার করে নানা রকম ওষুধপত্র নিয়ে বসেন। অভিজিৎ বলেন, “চাকরির জন্য টাকা দেওয়ার সামর্থ্যই ছিল না। তাই ও সব মাথাতেও আসেনি। এক মনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, “আর বোধ হয় হবে না!”

চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে স্নাতক হলেও তার পরে আর মেয়েকে বিএড পড়ানোর মত ক্ষমতা ছিল না বাবার। বিয়েতে পাওয়া গয়না বন্ধক দিয়ে কলেজে ভর্তি হন কল্যাণীর সুজাতা প্রধান। ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলেন। দু’বার মৌখিক পরীক্ষায় ডাকও পেয়েছেন। কিন্তু চাকরি পান নি। সংরক্ষণ ঠিক মতো মানা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে আদালতে মামলা করেছেন। সেই মামলা এখনও চলছে।

বছর তেতাল্লিশের সুজাতা এখন সংসারই সামলাচ্ছেন। স্বামীর ছোট্ট মুদির দোকান। মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তবু টেট নিয়ে একটা ক্ষীণ আশা মনের কোণে রয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, স্থানীয় এক নেতা ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ইচ্ছা বা সামর্থ্য কোনওটাই তাঁর ছিল না। সুজাতা বলেন, “জানেন, বাবা প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারিনি। চাকরি পেলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম।”

ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ধুবুলিয়ার পণ্ডিতপুর এলাকার বাসিন্দা ইসলামুল হক। মাত্র ২২ বছর বয়সে টেট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলেন, দু’বার মৌখিক পরীক্ষায় ডাকও পান। কিন্তু চাকরি হয়নি।

তাঁর দাবি, “আমার থেকে পিছিয়ে থাকা ছেলেরা চাকরি করছে। টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিল। এখন খুব ভয়ে আছে। কেউ কেউ ফোন করে জানতে চায়, চাকরিটা থাকবে তো?”

ইসলামুলের বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ-অসুস্থ বাবা। সংসারের জোয়াল টানতে এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গৃহশিক্ষকতা করেন বছর তিরিশের ইসলামুল। তাঁর আক্ষেপ, “এখন বুঝছি, যোগ্যতার মানদণ্ড অন্য কিছু ছিল, যা আমার ছিল না।”

TET Scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy