জমি পরিদর্শন করছেন দমকল বিভাগের কর্তারা। — নিজস্ব চিত্র।
জমিজট কাটিয়ে দমকল কেন্দ্র গড়ার পথে একধাপ এগোল জঙ্গিপুর।
শুক্রবার দমকল বিভাগের ডিভিসনাল অফিসার-সহ পদস্থ কর্তারা দমকল কেন্দ্রের জন্য জমি দেখতে আসেন রঘুনাথগঞ্জে। শহর থেকে মাইল পাচেঁক দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কাঁকুড়িয়ায় কৃষি দফতরের কৃষি খামারের পরিত্যক্ত জমিটি দেখতে যান তাঁরা। খামারের ভিতরে পুকুর লাগোয়া এক একর জমিতেই দমকল কেন্দ্র তৈরি হবে বলে জানান তাঁরা।
মুর্শিদাবাদের ডিভিসনাল অফিসার সুনীল ঘোষ বলেন, ‘‘চাহিদা মতো জমি না মেলায় জঙ্গিপুরে এত দিন দমকল কেন্দ্র করা যায়নি। কৃষি খামারের এক পাশে এক একর জমি নিলেছে। ওই জমিতে দুই পাম্পিং স্টেশন যুক্ত দমকল কেন্দ্র গড়া হবে।’’
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ২৩.৬০ একরের এই বিশাল জমিটির বর্তমান মালিক রাজ্য কৃষি দফতর। এক সময় সেখানে বিশাল খামার গড়ে তুলে চাষাবাদ করত কৃষি দফতর নিজের উদ্যোগেই। এখন সে জমি পরিত্যক্ত খন্ডহর বৈ কিছু নয়। এমনকি খামারে মধ্যেকার পুকুরটিও মজে গিয়ে এখন জল শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। জঙ্গিপুরের মহকুমা কৃষি আধিকারিক বিদ্যুৎ বর্মন বলেন, ‘‘দু’টি দফতরই রাজ্য সরকারের হলেও এই জমির মালিক কৃষি দফতর। বিশাল পরিমাণ জমি এখন পড়েই রয়েছে। এই জমিতে কৃষি মান্ডি গড়ার জন্য কৃষি বিপণন দফতরের আবেদন মতো তাদেরকে সে জমির কিছু অংশ হস্তান্তর করা হয়। দমকল দফতরও আবেদন করলে জমিটি হস্তান্তরে কোনও অসুবিধে নেই।’’
জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র স্থাপনের দাবি বহু দিনের। পুর-নির্বাচনে দমকল কেন্দ্র স্থাপনের ব্যর্থতা নিয়ে কংগ্রেস–সিপিএমের তরজাও চরমে উঠেছিল। প্রাচীন শহর জঙ্গিপুরে এখনও পর্যন্ত কোনও দমকল কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। অভিযোগ, তিন দশকের বাম জমানায় প্রতিটি নির্বাচনের আগে শাসক দল জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনও আশ্বাসই বাস্তবায়িত হয়নি।
তৃণমুলের শহর সভাপতি প্রাক্তন কাউন্সিলর গৌতম রুদ্র বলেন, ‘‘তিন দশক ধরে রাজ্যে এবং পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। অথচ দমকল কেন্দ্র গড়ার জন্য কোনও উদ্যোগ নেয়নি তারা। পুর সভার নিজস্ব জমি থাকা সত্ত্বেও তা দেওয়া হয়নি দমকল কেন্দ্র গড়ার জন্য।’’
প্রত্যুত্তরে প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরসভা কয়েকটি সরকারি জমি চিহ্নিত করে তৎকালীন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল। রাজ্য সরকার প্রস্তাব গ্রহণ করে দমকল কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদনও দেয়। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার জমি হস্তান্তরের ব্যাপারে আর কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তার ফলেই জঙ্গিপুর শহরে দমকল কেন্দ্র তৈরির কাজ অধরা থেকে গিয়েছে।’’
মৃগাঙ্কবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় তৃণমুল নেতা শেখ ফুরকান বলেন, ‘‘বাম সরকার এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনিই উল্টে সরকারি স্তরে এমন এক বিভ্রান্তিকর তথ্যলেখা হয় যা জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র গড়ার ক্ষেত্রে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
কী সেই বাধা? ফুরকানের দাবি, সরকারি নথিতে ২০০১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র গড়ার কথা লেখা রয়েছে। আসলে জঙ্গিপুরের জন্য অনুমোদিত ওই দমকল কেন্দ্রটি ধুলিয়ানে গড়া হয়েছে। ফলে একই জায়গায় পুনরায় দমকল কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব তাঁদের সমস্যায় ফেলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
জঙ্গিপুরে দমকল কেন্দ্র কতটা জরুরি গত কয়েক বছরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিকে নজর রাখলেই তা স্পষ্ট হবে। রঘুনাথগঞ্জ ফুলতলায় বাসে পৃষ্ট হয়ে মা ও ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে সেই আগুন নেভাতে ধুলিয়ান থেকে যখন দমকলের গাড়ি ফুলতলায় পৌঁছায় তখন বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। উমরপুরে মজুত করে রাখা গ্যাসের আগুনে যখন কয়েকটা দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল তখন সময়ে দমকলের গাড়ি না আসতে পারায় জনরোষের কবলে কম হেনস্থা হতে হয়নি ধুলিয়ানের দমকলের অফিসারদের। শহর লাগোয়া শ্রীকান্তবাটি হাইস্কুলের এক ছাত্রের দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উন্মত্ত জনতা ঘাতক বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নেভাতে দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল প্রায় দেড় ঘণ্টার পর। ততক্ষণে পুড়ে যায় বাসটি। জঙ্গিপুর শহরে ভাগীরথী সেতুর নীচে গজিয়ে ওঠা দোকান ঘরগুলিতে রাতে আগুন লাগলে সেখানে পৌঁছতেই পারেনি দমকলের কর্মীরা। পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর তিনটি স্তম্ভ সংস্কার করতে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের অফিসারদের কালঘাম ছুটে যায়।
সম্প্রতি জেলা সফরে এসে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান ডোমকল, ভগবানগোলা-সহ জেলায় চারটি দমকল কেন্দ্র গড়ার কথা ঘোষণা করেন। আরও ২২টি দমকল কেন্দ্র খোলার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি ভাবে। রাজ্য দমকল দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে মোট ২৯টি দমকল কেন্দ্র স্থাপিত হবে। বর্তমানে তিনটি রয়েছে। সুতি, লালবাগ, জিয়াগঞ্জ ও বেলডাঙা শহরে চারটি ও গ্রামীণ এলাকায় ২২টি দমকল কেন্দ্র গড়া হবে।’’
যদিও স্থানীয় এক বাম বিধায়কের আশঙ্কা, ‘‘জমি জট না হয় কাটল, কিন্তু প্রশাসনিক জট? সে বড় জটিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজত্বে বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার লোকের তো অভাব নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy