Advertisement
E-Paper

জাতের তোয়াক্কা নেই, ওঁরা মেতেছেন ঝাঁপানে

ওঁরা কালীগঞ্জের বাসিন্দা। অবসর সময়ে চাষ আবাদের কাজ করলেও তাঁদের পেশা দেবদেবীর গান-বন্দনা। মুসলিম হলেও হিন্দু পুজো-পার্বণে গান গাইতে এলাকায় তাঁদেরই ডাক পড়ে। জেলার প্রান্তিক এলাকার খেটে খাওয়ার মানুষগুলো জাত নিয়ে কখনও প্রশ্ন তোলেন না।

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৮:০০

আচমকাই গান থামল। ঢোলখানা নামিয়ে রেখে কোঁচর থেকে বিড়ি বের করলেন মদন দাস।

একটা ফুঁ দিয়ে মুখে দিতে গিয়েও হাত নামিয়ে নিয়ে তাড়া দেন পাশের সঙ্গীকে— ‘‘ঝটপট নমাজটা সেরে নাও দেখি কুদ্দুস ভাই। শেষ বেলায় আর একবার ঝালিয়ে নিতে হবে তো।’’ মদনের তাড়ায় ওজু করে নমাজে বসেন কালীগঞ্জের কুদ্দুস শেখ। সঙ্গ নেয় আরও কয়েক জন। কৃষ্ণনগর রবীন্দ্র ভবন চত্বরে নমাজ শেষ হতেই ফের শুরু হয় গান।

গান মানে ঝাঁপান— মা মনসার গান। সেই গানে পাশাপাশি গলা মেলান কুদ্দুস-মদন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রহিম শেখ, সওকত আলিরা গানের ছত্রে ছত্রে সমস্বরে বলছেন, জয় মা মনসার জয়। তাঁরা থামতেই বোলান গান ধরলেন আব্দুল কওসর শেখ। অপেক্ষায় ছিলেন মাবিয়া বিবি আর তাঁর স্বামী আকসর শেখ। তাঁরা গাইলেন আলকাপ।

ওঁরা কালীগঞ্জের বাসিন্দা। অবসর সময়ে চাষ আবাদের কাজ করলেও তাঁদের পেশা দেবদেবীর গান-বন্দনা। মুসলিম হলেও হিন্দু পুজো-পার্বণে গান গাইতে এলাকায় তাঁদেরই ডাক পড়ে। জেলার প্রান্তিক এলাকার খেটে খাওয়ার মানুষগুলো জাত নিয়ে কখনও প্রশ্ন তোলেন না।

রবিবার কুদ্দুস, কওসররা এসেছিলেন কৃষ্ণনগর রবীন্দ্র ভবনে। লোকশিল্পীদের জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ ভাতা চালু করেছে। প্রতিবছরই নাম নথিভুক্ত করা হয়। তার জন্য তাঁদেরও বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তিন দিন ধরে চলেছে সেই ব্যবস্থা। সেই পরীক্ষাই দিতে এসেছিলেন কালীগঞ্জের লোক শিল্পীরা। তার আগে খানিকটা মহলা দিয়ে নিচ্ছিলেন তাঁরা। চার দিকে যখন জাতপাত নিয়ে হানাহানি, সেই সময় নদিয়ার প্রত্যন্ত এক ব্লকের তস্য প্রান্তিক কয়েকটি গ্রামের লোকশিল্পীরা অন্য ভাবে ভাবতে শেখায়। গান শেষে মা মনসাকে প্রণাম করে কুদ্দুস বলেন, ‘‘শ্রাবণ, ভাদ্র মাসে আমাদের মতো ঝাঁপান শিল্পীদের সামান্য উপায় হয়। এক এক জন শিল্পী এই দু’মাসে হাজার সাতেক টাকা ঘরে নিয়ে আসতে পারি।’’ কালীগঞ্জের ধজপুকুরের বাসিন্দা আকসর শেখ বলছেন, ‘‘সারা বছর মুনিশ খেটে সংসার চলে আমাদের। পেটের ভাত জোগাড়ই তো বড় কথা গো। আমাদের আর রাম-রহিম ভেদ করে কী লাভ?’’ হজরত শেখ বলেন ‘‘প্রায় ২৩০ ঘর মানুষের বাস আমাদের গ্রামে। সবাই মুসলিম। একঘর খালি বৈষ্ণব। আমরা কখনও ঝাপান কখনও আলকাপ গান করি।’’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মদন বলেন, ‘‘দিনের শেষে আমরা যখন মহলা দিই, সারা পাড়ার মানুষ এসে জড় হয়। তাঁরাও মা মনসার নামে জয়ধ্বনি দেন। তখন আর জাতপাত কোথায়?’’

Religion Music Hindu Muslim ঝাঁপান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy