Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

পঞ্চায়েতে জোর খাটালে দল থেকে বার করে দেব, অবাধ ভোটের ‘চ্যালেঞ্জ’ নিলেন অভিষেক

রানাঘাটের অভিষেকের দলীয় সভায় যত না বিরোধীদের আক্রমণ ছিল, তার চেয়ে বেশি আত্মসমীক্ষা। বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে দলের পরাজয়ের খতিয়ান তুলে ধরে নেতৃত্বকে প্রশ্ন করলেন অভিষেক।

পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু এবং অবাধ করতে শাসক দলের তরফে আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিলেন অভিষেক।

পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু এবং অবাধ করতে শাসক দলের তরফে আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিলেন অভিষেক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:২৮
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোট অবাধ এবং সুষ্ঠু করার ব্যাপারে এ বার আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শাসকদলের তরফে অভিষেকের ঘোষণা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৃণমূলের কোনও নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ এলে তাঁকে দল থেকে বার করে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, দল থেকে নির্বাসন দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। সেই সময় ‘মাত্র এক ঘণ্টা’।

শনিবার নদিয়ার রানাঘাটের অভিষেকের দলীয় সভায় যত না বিরোধীদের আক্রমণ ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল ‘আত্মসমীক্ষা’। কখনও গত বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে দলের পরাজয়ের খতিয়ান তুলে ধরে স্থানীয় নেতৃত্বকে প্রশ্ন করেছেন অভিষেক। কখনও নিজেই জানালেন হারের কারণ। কেন ‘মুখ ফিরিয়ে’ নিয়েছে মানুষ। কয়েক জন নেতাকে দায়ী করে রানাঘাটবাসীর কাছে অভিষেকের বার্তা, ‘‘আপনাদের যেমন অভিমান আছে, আমারও আছে। কিন্তু আমি বলছি, আপনাদের দাবিকে মান্যতা দিয়েই দল কাজ করবে।’’

তাঁর দল মানুষের দল, কোনও নেতা সেখানে প্রধান নয়— বার বার এই দাবি এবং তার ব্যাখ্যা দিতে দিতে বড় চ্যালেঞ্জের কথা শুনিয়ে ফেললেন অভিষেক। ভোটমুখী পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন যে প্রশ্ন আগেই তুলেছে, ঘটনাচক্রে অভিষেকের মন্তব্যে তারই অনুরণন। চ্যালেঞ্জ কঠিন। তবে সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব নিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। অভিষেকের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট অবাধ হবে। গণতান্ত্রিক ভাবে ভোট হবে। এটা আমার গ্যারান্টি।’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘জোর খাটালে (তৃণমূলের কেউ) দল থেকে বার করে দেব... এক ঘণ্টায় দল থেকে বার করব। দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হবে।’’ রানাঘাটের মানুষের কাছে বিগত কিছু কাজের জন্য ক্ষমা চাইলেন অভিষেক। তবে এই স্বচ্ছ এবং অবাধ ভোট রাজ্যের সর্বত্র হবে বলে জানালেন তিনি।

আসলে বিগত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বার বার শাসক দলকে আক্রমণ করে আসছেল বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ যে পুরোপুরি বায়বীয় নয়, তা তৃণমূলের অনেক নেতার ‘স্বীকারোক্তি’তেই স্পষ্ট। অভিষেক আগেই বলেছেন, ‘‘কোথাও কোনও জোর-জবরদস্তি করে পঞ্চায়েত দখল করা চলবে না। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত করতে হবে, এমন কোনও কথাও নেই। পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু এবং অবাধ হতে হবে।’’

২০১৬ সালে রাজ্যে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সেই সময় তাদের আসন সংখ্যা ছিল ২১১। এর বছর দুয়েকের মধ্যে ২০১৮ সালে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই রাজ্যের ২০ হাজারের বেশি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। পঞ্চায়েতের তিনটি স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়েছিলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। যা রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাসে ‘রের্কড’। তবে বিরোধীরা অভিযোগ করে শাসকদলের গাজোয়ারির ফসল এই ফলাফল।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকায় দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এ বার আসন বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার। গত বার গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোট হয়েছিল মোট ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসনে। এ বার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার ৪০৪। গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ২০১৮ সালের তুলনায় দু’টি কমে হয়েছে ৩ হাজার ২০৫। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদেও বেড়েছে আসন। পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যা দু’টি বেড়ে হয়েছে ৩৩২টি। জেলা পরিষদ স্তরে ৮২৫ থেকে ১০৩টি আসন বেড়ে হয়েছে ৯২৮টি। তাই অভিষেকের চ্যালেঞ্জ কঠিন। অতীতের অভিযোগ মুছে এত গুলো বুথে স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট হবে বলে শাসকের পক্ষে যে বার্তা অভিষেক দিলেন, তার বাস্তব পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee TMC Panchayat Elction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE