Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Neharitala

ক্ষোভ শুনেই নেহারিতলার বাড়িতে বিধায়ক

দিল্লি থেকে টাকা পাঠিয়ে বার বার খোঁজ নিতেন রমজান— ‘বুনের বিয়েটা ইবার দিতেই হবে!’

রমজান শেখের বাড়িতে এলেন বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র

রমজান শেখের বাড়িতে এলেন বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নওদা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

ঘরে রয়েছে অষ্টাদশী বোন। বাড়িটাও থাকার যোগ্য করতে হবে। দিল্লি পাড়ি দেওয়ার আগে এটাই ছিল নেহারিতলা গ্রামের রমজান শেখের লক্ষ্য। সেই স্বপ্নের খানিকটা মিলেছে, ভিন রাজ্যে রুজির টানে গিয়ে রমজান তৈরি করেছেন দু-কামরার পাকা বাড়ি। এ বার ইদের আগে বাড়ি ফিরে প্লাস্টার, রং করার পাশাপাশি বোনের বিয়ে-পর্বটাও সেরে ফেলার ইচ্ছে ছিল তাঁর। রমজানের পরিবার ছোট বোন আয়েশা খাতুনের জন্য পাত্র দেখাও শুরু করে ছিলেন। দিল্লি থেকে টাকা পাঠিয়ে বার বার খোঁজ নিতেন রমজান— ‘বুনের বিয়েটা ইবার দিতেই হবে!’

কিন্তু সেই স্বপ্নে জল ঢেলেছে দিল্লির হিংসা। ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে। বুধবার সকালে নেহারিতলা গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের শাহিনা মমতাজ তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিয়ে রমজানের সেই স্বপ্নেই কিঞ্চিৎ আশার আলো ছড়িয়ে এলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান সাবানা খাতুনও।

দিল্লি থেকে ফেরার পরে প্রতিশ্রুতির বহর কম ছিল না। জেলা প্রশাসন এবং শাসক দলের তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রামে বেঁধে রাখতে রুজির উপায় খুঁজে দেওয়ার পাশাপাশি আশ্বাস ছিল আর্থিক অনুদানের। দিন যত গড়িয়েছে, প্রায় দিন আনি খাই স্রমিকদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ‘কেউ কথা রাখে না’। তাই গত দু’দিন ধরেই জাফরাবাদে প্রায় নিরন্ন অবস্থায় আড়াই দিন কাঠানো এগারো শ্রমিকের প্রায় সকলেই দিল্লি ফেরার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘দিল্লি একটু শান্ত হলেই ফিরে যাব!’

সে কথা কানে গিয়েছিল প্রশাসনের। তৃণমূলের নেতাদের কাছেও সেই আকক্ষেপের কথা পৌঁছেছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির রমজানের বাড়ি বয়ে এসে অর্থ সাহায্য তারই নামান্তর বলে মনে করছেন ওই শ্রমিকেরা। এ দিন শাহিনা জানিয়ে যান, রমজানের পরিবারকে তিনি আশ্বাস দিয়ে যান, মেয়ের বিয়ের আগে বিডিও-র দফতর থেকে রুপশ্রী প্রকল্পের জন্য আর্থিক সহায়তার। ওই প্রকল্প থেকে বিবাহ যোগ্য মেয়েদের ২৫ হাজার টাকা সাহায্য করা হয়।

রমজানের মা খুরশিনা বিবি বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ে দেওয়া কি চাট্টিখানি কথা, ভাঙা ঘর গড়া, বিয়ের ব্যবস্থা করা— খরচের বহর তো কম নয়। রমজান সেই তাগিদেই ভিন রাজ্যে গিয়েছিল। কিন্তু সে সব আশায় তো জল ঢেলে দিল দিল্লির পরিস্থিতি।’’ রমজানের বাবা পেশায় দিনমজুর ইছানবী শেখ বলেন, ‘‘এলাকায় সারা বছর কাজ কোথায়, সামান্য রোজগারে সংসার টানা। রমজান টাকা না পাঠালে ঘর মেরামত তো দূরের কথা দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হত।’’

বিধায়ক শাহিনা মমতাজ বলেন, ‘‘রমজানের পরিবারের দুরবস্থার কথা শুনে আমরা যৎসামান্য আর্থিক সহায়তা করলাম। মনে রাখবেন, আমরা মনে প্রাণে ওঁদের পাশে আছি। রমজান একা নন, দিল্লি ফেরত অন্য শ্রমিকদেরও সাহায্য করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Neharitala TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE