বেশ কয়েক বছর দলের মূলস্রোত থেকে কার্যত দূরে থাকার পর অবশেষে হরিণঘাটার চঞ্চল দেবনাথকে সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরিয়ে আনল তৃণমূল। তবে কল্যাণীর অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কুকে এখনও কোনও দলীয় পদ দেওয়া হয়নি।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চঞ্চল এবং অরূপকে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে ক্রমশ কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে দাবি দলের একাংশের। তার আগে দীর্ঘদিন তৃণমূলের হরিণঘাটা ব্লক সভাপতি ছিলেন চঞ্চল। বাম আমলে জেলা পরিষদের শেষ বোর্ডে তিনি ছিলেন বিরোধী দলনেতা। পরে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর হন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। অন্য দিকে, অরূপ এক সময়ে ছিলেন তৃণমূলের কল্যাণী শহর সভাপতি এবং স্থানীয় রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাবশালী। কিন্তু পার্থ-ঘনিষ্ঠতার দায়ে দু’জনকেই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়।
এ দিকে পর পর কয়েকটি নির্বাচনে দক্ষিণ নদিয়ায় তৃণমূলের ভরাডুবি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নেতৃত্বের কপালে। গত পঞ্চায়েত ভোটে হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতি দখল করলেও বেশ কয়েকটি গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির কাছে ধাক্কা খেতে হয়েছে তাদের। দলের একাংশের বক্তব্য, চঞ্চলের মতো অভিজ্ঞ সংগঠক না থাকার প্রভাব স্পষ্টই বোঝা গিয়েছে। গত বিধানসভা ও লোকসভা— দুই নির্বাচনেই দক্ষিণ নদিয়ায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রাজ্যের শাসক দলকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
দলীয় সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতিতেই অরূপ এবং চঞ্চলকে ফের দলের মূলস্রোতে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত লোকসভা নির্বাচনে চঞ্চল ও অরূপকে বনগাঁ কেন্দ্রে প্রচারের কার্যকরী কমিটিতে স্থান দেওয়াতেই সেই ইঙ্গিত ছিল। তবে চঞ্চলের ঘরে ফেরা এতটা সহজ ছিল না। কারণ দলের রানাঘাট সংগঠনিক জেলা সভাপতি ও হরিণঘাটার বাসিন্দা দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ কিছু দিন ধরেই শীতল।
গত পঞ্চায়েত ভোটে চঞ্চল বা তাঁর ঘনিষ্ঠেরা কেউ টিকিটও পাননি।অবশেষে তৃণমূলের সাম্প্রতিক দবদলে চঞ্চলকে ফের পদে ফেরানো হল। আরও লক্ষণীয় যে, রানাঘাট সংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অর্থাৎ দেবাশীষের পরেই সংগঠনে দ্বিতীয় পদটি তাঁকে দেওয়া হয়েছে। চঞ্চল বলেন, “দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, পালন করেছি। নতুন দায়িত্বও আমি সর্বশক্তি দিয়ে পালন করব।”
তবে অরূপ এখনও কোনও দলীয় পদ পাননি। তিনি বর্তমানে কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল। তবে কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি পদে আগে যাঁকে বসানো হয়েছিল, কট্টর অরূপ-বিরোধী বলে পরিচিত সেই সজল দে-কে সরিয়ে সেই জায়গায় আনা হয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান সুশীল তরফদারকে— যিনি আবার অরূপ-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
অরূপ বলেন, “আমায় পুরসভায় চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দল যখন যা দায়িত্ব দেবে, পালন করব।” রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সব দিক বিবেচনা করেই নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের মধ্যে কোনওদ্বন্দ্ব নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)