Advertisement
E-Paper

নাচের বোলেই মিলিয়ে যায় অবাধ্য মন-কেমন

সকলেই দ্রুত পায়ে নীচে এসে শিশুর মতো ঘিরে ধরে কৃষ্ণনগরের নৃত্যশিল্পী গোপা মুখোপাধ্যায়কে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৪
নাচের তালিম নিচ্ছেন আবাসিকেরা। কৃষ্ণনগরের সরকারি হোমে। নিজস্ব চিত্র।

নাচের তালিম নিচ্ছেন আবাসিকেরা। কৃষ্ণনগরের সরকারি হোমে। নিজস্ব চিত্র।

টিনের দরজাটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে খুললেই নেচে ওঠে তিন তলার আবাসিকেরা। বহু দূর থেকেও শোনা যায় ওদের উচ্ছ্বাস, ‘‘নাচের দিদি এসেছে, নাচের দিদি এসেছে।”

সকলেই দ্রুত পায়ে নীচে এসে শিশুর মতো ঘিরে ধরে কৃষ্ণনগরের নৃত্যশিল্পী গোপা মুখোপাধ্যায়কে। চার মাস ধরে তিনিই যেন কৃষ্ণনগরের সরকারি হোমের আবাসিকদের কাছে এক ঝলক দখিনা বাতাস। তাঁর বোলের তালে ছন্দ ওঠে আবাসিকদের পায়ে। নেচে ওঠে হৃদয়। প্রাণ খুলে ওরা গায়, ‘‘হৃদয় আমার নাচেরে...।’’ এত দিনের হতাশ, বিষণ্ণ মুখগুলো যেন ঝলমলিয়ে ওঠে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম। জীবনের সমস্ত হতাশা, না পাওয়া ওরা যেন এ ভাবে ভুলে গিয়ে জীবনের অন্য মানে খোঁজে।” বছর দু’য়েক আগে কারিগরি শিক্ষা দফতরের সহযোগিতায় হোমের মেয়েদের স্বনির্ভর করতে ‘সফট টয়’ তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে শিক্ষক নিয়ে এসে বিউটিশিয়ান কোর্সও করানো হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু কোথাও যেন একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছিল। কোনও ভাবেই যেন মনের নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। বছরের পর বছর ধরে পরিবার-পরিজন ছেড়ে হোমে থেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে হোমের কিশোরী আবাসিকরা হতাশ হয়ে পড়ে। বাসা বাঁধে অবসাদ।

এমন পরিস্থিতিতে অন্য ভাবে ভাবতে শুরু করে জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। হোম কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা বেছে নেয় ‘কালচারাল থেরাপি’। সেই মতো ঠিক হয়, যোগ ব্যায়ামের পাশাপাশি তাদের নাচ ও গানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। হোমের এক কর্মী নিজেই গান শেখানো শুরু করেন। আর নাচের জন্য ডাক পড়ে কৃষ্ণনগরের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী গোপা মুখোপাধ্যায়ের। প্রতি সোমবার বিকেলে তিনি আসেন নাচ শেখাতে। আর তাঁর জন্য দুপুর থেকে অপেক্ষা করে থাকে আবাসিকেরা। গোপাদেবী বলেন, “এত বছর ধরে নাচ শেখাচ্ছি। কিন্তু হোমে নাচ শেখাতে এসে একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে। বিষণ্ণ মুখগুলো এখন যেন ঝলমলিয়ে ওঠে।” শুধু সোমবার নাচের ক্লাসেই নয়, সময় পেলেই হোমের হলে এসে মনের আনন্দে তারা নাচতে শুরু করছে। আর সেই কারণে নিজের টেপ রেকর্ডারটাই হোমের আবাসিকদের দিয়ে গিয়েছেন নাচের দিদিমনি।

বছর খানেক আগে তেহট্ট থেকে উদ্ধার হওয়া এক বাংলাদেশের এক নাবালিকা সব সময় গোমড়া মুখ করে বসে থাকত। এখন সে দিনভর গুনগুন করে গাইছে, ‘‘আনন্দধারা বহিছে...।’’ গলা মেলাচ্ছে বাকিরাও। এই হোমে আবাসিকের সংখ্যা ৩৫। জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা চাইছি ওরা মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ থাকুক। আনন্দে থাকুক। সেই কারণেই এই কালচারাল থেরাপি। আর তাতে আমরা পুরোপুরি সফল।”

home Dance Class
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy