ক্ষীণ দৃষ্টি ও দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য বিশেষ ধরনের চশমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন নদিয়ার কলেজ পড়ুয়া অর্ক বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
এক মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনও কিছু থাকলেই জানিয়ে দেবে সেন্সর। আরও কাছে গেলে মাইক্রো স্পিকার থেকে বেজে উঠবে সতর্কতামূলক শব্দ। একটি সেন্সর, একটি মাইক্রো স্পিকার, ব্যাটারি— সব মিলিয়ে একটি স্মার্ট সানগ্লাস। ক্ষীণ দৃষ্টি ও দৃষ্টিহীন মানুষদের জন্য বিশেষ ধরনের চশমা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন নদিয়ার কলেজ পড়ুয়া অর্ক বিশ্বাস। এই ধরনের চশমা অবশ্য প্রথম নয়। বাজারে স্মার্ট চশমার ন্যূনতম দাম ৬ হাজার টাকা। সেখানে মাত্র ২০০ টাকায় চশমা বানিয়ে ফেলেছেন নদিয়ার মাজদিয়া সুধীররঞ্জন লাহিড়ী কলেজের ফাইনাল বর্ষের এই পড়ুয়া। দাম আর একটু বাড়িয়ে ‘সেন্সিং রেঞ্জ’ ১০ ফুট এবং ‘ভয়েস কমান্ডিং সিস্টেম’ যুক্ত করা হলে বহুমূল্য স্মার্টগ্লাসকেও তাঁর চশমা টেক্কা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্ক।
অর্ক জানান, কলেজের এনএসএস ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ক্যাম্পে ঘোরার সময় তিনি দেখেন, অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে সহযোগী যন্ত্র থাকলেও দৃষ্টিহীনদের জন্য সেই রকম কোনও যন্ত্র নেই। আর থাকলেও তা ব্যয়বহুল। তার পরেই দৃষ্টিহীনদের জন্য স্মার্ট চশমা তৈরির করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন অর্ক। তাঁর কথায়, ‘‘দৃষ্টিহীনদের কালো চশমা পরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আদৌ কি সেটা তাঁদের কোনও কাজে লাগে? তাই ভাবলাম, ওঁদের জন্য যদি কোনও চশমা তৈরি করা যায়। চশমার প্রোটোটাইপ তৈরি করে ফেলেছি। পরীক্ষাও সফল হয়েছে। এক-দু’সপ্তাহের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য চশমা তৈরি হয়ে যাবে।’’
কিন্তু কী ভাবে ২০০ টাকায় তৈরি হল স্মার্ট চশমা?
অর্ক জানান, স্থানীয় মাজদিয়া বাজার থেকে একটি বিশেষ সেন্সর খুঁজে পান তিনি, যার দাম মাত্র ৫৫ টাকা। তার সঙ্গে ১০ টাকার মাইক্রো স্পিকার, ১৫ টাকার ব্যাটারি, ২৫ টাকার চার্জিং ডিভাইস ও অন্যান্য জিনিস মিলিয়ে ১৫ টাকা লাগে। আর সানগ্লাসের দাম ৮০ টাকা। এই সব সামগ্রী দিয়েই তৈরি হয়েছে ওই স্মার্ট চশমা। অর্ক বলেন, ‘‘এক বার চার্জ দিলে অন্তত ৬ ঘন্টা চালু থাকবে চশমাটি। ভবিষ্যতে এই স্মার্ট চশমার সঙ্গে জিপিএস, মোটর স্পিকার যুক্ত করে এই চশমাকে আরও বেশি স্মার্ট করতে চাই। যাতে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।’’
অর্ক নিজে অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে। বাবা পেশায় কৃষক। বাড়িতে কৃষি পণ্যের দোকান রয়েছে একটি। মা বাড়িতেই থাকেন। ছেলের এই সাফল্যে বাবা নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসার। সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থা যদি অর্কের পাশে দাঁড়ায়, তা হলেই ও এগোতে পারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy