Advertisement
২১ মে ২০২৪

ছাত্র সংঘর্ষ ঠেকাতে কলেজে সিসিটিভির সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

শেষ পর্যন্ত ছাত্র সংঘর্ষ ঠেকাতে কলেজগুলিতে ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিল জেলাপ্রশাসন। গত কয়েকদিন ধরে বহরমপুরের দু’টি কলেজে লাগাতার ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। কলেজে বারবার হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলাপ্রশাসনও। শুক্রবার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, সমস্ত ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রশাসন।

বহরমপুর কলেজে পুলিশি টহলদারি। নিজস্ব চিত্র।

বহরমপুর কলেজে পুলিশি টহলদারি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত ছাত্র সংঘর্ষ ঠেকাতে কলেজগুলিতে ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিল জেলাপ্রশাসন। গত কয়েকদিন ধরে বহরমপুরের দু’টি কলেজে লাগাতার ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। কলেজে বারবার হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলাপ্রশাসনও। শুক্রবার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, সমস্ত ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে প্রশাসন। ওই বৈঠকে বহরমপুর কলেজ, বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ, বহরমপুর গার্লস কলেজ ছাড়াও নওদা, বেলডাঙা ও হরিহরপাড়ার কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “সোমবারের মধ্যে বহরমপুর মহকুমার বিভিন্ন কলেজে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেননা, কলেজে হামলার ঘটনায় অনেক সময়ে যারা প্রকৃত দোষী, প্রমাণের অভাবে অনেক সময়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে না। এখন সিসিটিভি থাকলে তার ফুটেজ দেখে কারা প্রকৃত দোষী তা জানা যাবে।”

গত ২২ নভেম্বর বহরমপুর কলেজে ছাত্রপরিষদ ও তৃণমূল ছাত্রপরিষদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় ওই দু’পক্ষ জড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পরে গত সোমবার ‘গার্ড ফাইল’ থেকে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নাম-ঠিকানা লেখা নিয়ে ফের বহরমপুর কলেজ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই দিন ‘ছুটি’ ঘোষণা করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকে বুধবার পর্যন্ত ওই কলেজ বন্ধ ছিল। সোমবারের পরে দু’দিন কলেজ বন্ধ থাকার পরে পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে বৃহস্পতিবার বহরমপুর কলেজ খোলা হয়। কলেজ খোলার পরেই ‘বহিরাগতরা’ লাঠি-রড-বাঁশ-কাঠ নিয়ে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় সাত জন ছাত্র জখম হন। তার মধ্যে চার জন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর পাশাপাশি গত মঙ্গলবার কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘প্রতিবেদন’ নিয়ে বিক্ষোভের জেরে পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায় কৃষ্ণনাথ কলেজের। তার পরেই বুধবার থেকে ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

গত কয়েকদিনে বেশ কয়েক বার কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। এই অবস্থায় পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেয়ে জেলাপ্রশাসন তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতো এ দিনের বৈঠকে কলেজ অধ্যক্ষ, ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাস হাজির ছিলেন। ওই বৈঠকে সকলেই সিসিটিভি বসানোর পক্ষে মত দেন। সুপ্রিয়বাবু বলেন, “ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বহরমপুর কলেজ ও কৃষ্ণনাথ কলেজের সামনে বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সেইসঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষ একজনকে মনোনীত করবে, যিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়া সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলবে।”

এ দিকে বহরমপুর কলেজে ‘বহিরাগত’ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। কৃষ্ণনাথ কলেজ ছাত্র সংসদের দিবা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র পরিষদের বিপ্লব কুণ্ডু ও ছাত্র পরিষদ সমর্থক শুভঙ্কর সাহা গ্রেফতার হন। বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাস বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, বেআইনি অস্ত্র হাতে খুনের চেষ্টার অভিযোগও দায়ের হয়েছে। এ দিন মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।”

বহরমপুর কলেজের হামলার ঘটনার পরেই স্থানীয় সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘‘মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ছাত্র পরিষদের ছেলেদের। তারই প্রতিরোধ করেছে তারা।” দলীয় দুই সদস্যের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বহরমপুর শহরে ‘ধিক্কার মিছিল’ কর্মসূচি গ্রহণ করে জেলা ছাত্র পরিষদ। জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসুমী বেগম বলেন, “পুলিশের পক্ষপাত মূলক আচরণের জন্যই বহরমপুরের ওই দু’টি কলেজে অস্থিরতা।” এ দিন জেলাপ্রশাসনের বৈঠকেও ছাত্রপরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্রপরিষদ একযোগে বহরমপুর থানার আইসি’র কড়া সমালোচনা করে। তৃণমূল ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি রাজা ঘোষ আবার বহরমপুর কলেজ ও কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “ওই দুটি কলেজের অধ্যক্ষ পক্ষপাতদুষ্ট। বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন। ফলে তাঁদের অধীনে কলেজ ভোট হলে নিরপেক্ষতার অভাব হবে। তাঁরা নিরপেক্ষ ভাবে ভোট পরিচালনা করতে ব্যর্থ হবেন।” ভোট পরিচালনার দায়িত্ব জেলাপ্রশাসনের কোনও কর্তাকে দেওয়ার দাবিও তোলেন তিনি। বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডল অবশ্য নিজেই বলেন, “কলেজ ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নিক কোনও প্রশাসনিক কর্তা। আমি ভোট পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে চাই।

তবে বেলডাঙা ও নওদা কলেজ কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই তাদের কলেজে সিসিটিভি লাগিয়েছে। এখন বহরমপুরের তিনটে কলেজ ও হরিহরপাড়া কলেজ কবে সিসিটিভি বসায়, এখন তা দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cctv berhampore college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE