ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে কলেজে কলেজে যখন ছাত্র-সংঘর্ষ রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন বেলডাঙা হরিহরপাড়ার হাজি এ কে খান কলেজ ভুগছে বিচিত্র অসুখে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে একদল ‘ছাত্র’-এর দাপটে বন্ধ কলেজের পঠন-পাঠন। তবে তাঁদের পরিচয় নিয়েই রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশা। নিজেদের ছাত্র বলে দাবি করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন অন্য কথা। ওই ‘ছাত্রদের’ সরাসরি ‘বহিরাগত’ বলে দাবি করছেন তাঁরা। কলেজে কোনও ছাত্র সংসদ না থাকলেও এই গোলমালের পিছনে যে কংগ্রেসের মদত রয়েছে তেমন অভিযোগও করছেন শিক্ষকদের একাংশ।
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন কলেজ শুরু হওয়ার পরেই একদল ছাত্র কলেজে ঢুকে পড়েন। তাঁদের দাবি, কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় ‘বিবিধ খাতে’ যে ১০০ টাকা জমা নেওয়া হয়েছিল তার হিসাব দিতে হবে। বিক্ষোভের জেরে শুক্র ও শনিবারও কলেজে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও কোনও ক্লাস করা সম্ভব হয়নি।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, কলেজে বড় মঞ্চ তৈরি করে জমকালো নবীনবরণ অনুষ্ঠান করতে হবে। সেইসঙ্গে কলেজের ক্রীড়া সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। সীমানা প্রাচীর দিয়ে অবিলম্বে ঘিরে দিতে হবে কলেজ চত্বর। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আবিদ জামান মণ্ডল, হানিফ মিয়াঁ, ইউসুফ আহমেদরা দাবি করেন কলেজ ছাত্রদের টাকা কী ভাবে খরচ হবে তা ছাত্ররাই ঠিক করবেন। তাঁদের যুক্তি নবীনবরণের অনুষ্ঠান সব কলেজেই বড় করে হয়। তাঁদের কলেজেও করতে হবে। বিশেষত এই খরচ নাকি উঠে যাবে ওই ‘বিবিধ খাতে’ নেওয়া টাকা থেকেই। ওই যুবকরা জানিয়ে দিয়েছেন দাবি মানা না-হলে আন্দোলন চলবেই। এমনকী সোমবারেও তাঁরা কলেজে স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু করতে দেবেন না বলেও হুমকি দিয়েছেন।
কিন্তু তাঁরা কি আদৌ ছাত্র? কলেজ কর্তৃপক্ষ যে অন্য কথা বলছেন!
বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই এ বছর এই কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পার্ট-টু বা পার্ট-থ্রি পরীক্ষা দিয়েছেন। এখনও তাঁরা কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাননি। ফলে বহিরাগত তো দূর অস্ত, তাঁদের প্রাক্তনীও বলা যায় না।
কলেজ কর্তৃপক্ষের যুক্তি, যাঁদের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, তাঁরা এখন আর কলেজে ক্লাস করে না। তাই তাঁদের নিয়মিত ছাত্র বলা যায় না। এমনকী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “ওদের সঙ্গে বাইরের কিছু ছেলেও ছিল। তাঁরা অবশ্যই বহিরাগত।”
হরিহরপাড়ার সিপিএম বিধায়ক তথা ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ইনসার আলি বিশ্বাস বৃহস্পতিবারই দাবি করেছিলেন, যাঁরা কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে তাঁরা কংগ্রেস মদতপুষ্ট দুষ্কৃতী। এ দিন তিনি বলেন, “কলেজের বয়স মাত্র ছ’বছর। এখনও কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। আর্থিক সমস্যা চরমে। ফলে জাঁকজমকের নবীনবরণ অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। বরং কলজের টাকায় তৈরি শিক্ষা সরঞ্জাম যারা ভেঙেছে তারা শাস্তি পাবে।”
শুক্রবার প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হবে। তারপর তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজের কার্যকরী অধ্যক্ষ প্রভাসচন্দ্র সামন্ত বলেন, “আশা করছি খুব দ্রুত অচলাবস্থা কাটাতে পারবে পরিচালন সমিতি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy