Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ফের বোমাবাজি, উত্তপ্ত অরঙ্গাবাদ

চব্বিশ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই আবার কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকা সুতির ইমামপাড়া-মহলদারপাড়া। মঙ্গলবার ওই এলাকায় দলীয় কার্যালয় দখলকে ঘিরে মারামারিতে জড়িয়েছিল দুই দল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার এলাকা দখলকে ঘিরে যুযুধান দু’পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মারামারিতে একাধিক ব্যক্তি জখম হয়েছেন। বোমার আঘাতে এবু শেখ নামে এক কংগ্রেস সমর্থকের হাত উড়ে গিয়েছে বলা জানা গিয়েছে।

পড়ে রয়েছে ভাঙা চেয়ার।

পড়ে রয়েছে ভাঙা চেয়ার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই আবার কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকা সুতির ইমামপাড়া-মহলদারপাড়া। মঙ্গলবার ওই এলাকায় দলীয় কার্যালয় দখলকে ঘিরে মারামারিতে জড়িয়েছিল দুই দল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার এলাকা দখলকে ঘিরে যুযুধান দু’পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মারামারিতে একাধিক ব্যক্তি জখম হয়েছেন। বোমার আঘাতে এবু শেখ নামে এক কংগ্রেস সমর্থকের হাত উড়ে গিয়েছে বলা জানা গিয়েছে। তাঁকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে এক তৃণমূল কর্মীর। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি।

জঙ্গিপুরের এসডিপিও ওয়াংডেন ভুটিয়া বলেন, “এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। গোলমালে জড়িতদের গ্রেফতার করতে দুপুর থেকেই গ্রামে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ঘটনার পরে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ নামানো হয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে জনা কয়েক ঘরছাড়া কংগ্রেসী সমর্থক গ্রামে ফিরতে গেলে তৃণমূলের লোকজন তাঁদের বাধা দেয়। এরপরই থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পুলিশের উপস্থিতিতেই দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি শুরু হয়। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয় দখল করার অভিযোগ তোলে। সংঘর্ষের তীব্রতায় হকচকিয়ে যান এলাকার ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। হতভম্ব হয়ে যান ঘটনাস্থলে হাজির থাকা একদল সিভিক ভলেন্টিয়ারও।

উভয় পক্ষেরই এই সংঘর্ষ প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। তারপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় পুলিশ দুপুর থেকেই ধরপাকড় শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, বোমাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আট জনকে গ্রেফতরা করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

তৃণমূলের পাল্টা নালিশ, কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জোর করে তাদের কার্যালয় দখল নিতে যায়। ভাঙচুর চালায় কার্যালয়ে। তছনছ করা দলীয় ভবন। এই ঘটনায় উভয় দলই একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। কংগ্রেসের সুতি-২ ব্লকের সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারীরা এলাকার দখল নিজেদের কব্জায় রাখতে বোমাবাজি চালিয়েছে। ওদের দৌরাত্ম্যে ইতিমধ্যে আমাদের একাধিক কর্মী বাড়িছাড়া। এদিন তাঁরা গ্রাম ঢুকতে গেলে তৃণমূলের লোকজন বাধা দেয়। এলোপাথারি বোমা ছোড়ে। বোমার ঘায়ে আমাদের এক কর্মীর হাত উড়ে গিয়েছে।’’

এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে আলফাজুদ্দিন জানান, পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। ফলে শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বল্গাহীন হয়ে পড়ছে। পুলিশ তাদের অভিযোগ কানেই তুলছে না। সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের সুতি-২ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘‘এ দিন সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আমাদের কর্মীরা বসেছিল। বিনা প্ররোচনাতেই কংগ্রেসের লোকজন তাদের মারধর করে। এলাকায় বোমাবাজি করল।”

দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গা পাড়ের ইমামবাজার-মহলদারপাড়া গ্রামটি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার নিরিখে সংবেদনশীল হিসেবে পরিচিত। গ্রামের কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এই এলাকা চোরাকারবারীদের কাছে মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। পুলিশের দাবি, এলাকার দখল নিতে মাঝেমধ্যেই দুষ্কৃতীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ইদানীং ওই সমাজবিরোধীরাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে মারামারি করছে। দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষে লাগছে রাজনীতির রং। কংগ্রেস ও তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও এলাকার চোরাকারবার ও সেই সূত্রে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তের কথা স্বীকার করেছেন।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathganj bombing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE